এ বছর টোকিও অলিম্পিকে বিভিন্ন ইভেন্টে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন শতাধিক অ্যাথলিট। ক্রীড়াপ্রেমী বাঙালিও পিছিয়ে নেই! বাংলার তিন প্রতিভাবান অলিম্পিয়ান নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে জায়গা করে নিয়েছেন এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতায়। তাঁদের মধ্যে টেবিল টেনিসে সুতীর্থা মুখোপাধ্যায় ও জিমন্যাস্টিকে প্রণতি নায়েক আগেই স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হন। লক্ষ্যভেদের অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছেও এবার লড়াই থেমে গেল তীরন্দাজ অতনু দাসের।
ভারত পেট্রোলিয়ামে কর্মরত বরানগরের অতনু দাস তীরন্দাজিতে কেরিয়ারের শুরু থেকেই নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়ে এসেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁর অভিষেক ঘটে ২০০৮ সালে। গতবার অর্থাৎ ২০১৬ রিও অলিম্পিকে জায়গা করে নিয়েছিলেন প্রথম ১৬-র মধ্যে। এবছর ইতিমধ্যেই গুয়াতেমালায় আর্চারি বিশ্বকাপে পুরুষদের বিভাগে স্বর্ণপদক জিতেছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, স্বর্ণপদক জিতেছেন তিনি এবছরের প্যারিস ওপেনের ফাইনালেও। বিশ্বকাপে দশটি পদক, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে দুটি পদক এবং একাধিক খেতাবের অধিকারী অতনু বর্তমানে রয়েছেন রিকারড মেন বিভাগে বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এ ৮ নম্বরে। এবার পাখির চোখ ছিল অলিম্পিকে সোনা। জানপ্রাণ লড়িয়ে ইতিমধ্যেই লন্ডন অলিম্পিক্সের সোনাজয়ী তীরন্দাজ ওহ জিন হাইককে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।
বাছাই পর্বে কঠিন প্রতিপক্ষের সামনে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল না আশানুরূপ। প্রথম সেটে ২৫-২৬ ব্যবধানে পরাজিত হলেও, ছন্দে ফিরতে বেশী সময় নেননি তিনি। পরপর দুটো সেট ড্র করে চতুর্থ সেটে ২৭-২২ ব্যবধানে জেতেন তিনি। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। শ্যুটআউটে সোনাজয়ী দক্ষিণ কোরিয়ার হাইক দুরন্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ৯ পয়েন্ট পান। লড়াই কঠিন হলেও, অবিশ্বাস্যভাবে স্নায়ুর চাপকে উপেক্ষা করে ১০ পয়েন্ট পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন বাংলার ঘরের ছেলে অতনু। বলা বাহুল্য, গোটা সময় জুড়েই গ্যালারি থেকে গলা ফাটিয়ে উৎসাহ দিয়ে গেছিলেন তাঁর সুযোগ্যা স্ত্রী, অপর অলিম্পিয়ান তীরন্দাজ দীপিকা কুমারী। শুক্রবার অবশ্য দীপিকাও ছিটকে যান ব্যক্তিগত বিভাগে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু ধনুর্যুদ্ধে স্বামীকে সমর্থন ও আত্মবিশ্বাস জোগানোয় ছিল না কোনো খামতি।
শনির সকালে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে অতনুর বিপক্ষে ছিলেন জাপানের তাকাহারু ফুরুকাওয়া। বঙ্গসন্তানের পদকের আশায় প্রার্থনায় মগ্ন ছিল গোটা দেশ। আর অতনু নিজে? কোনোরকম উচ্ছ্বাস নয়, তিনি জোর দিয়েছিলেন মনোনিবেশে। আড়ালে থেকেছেন যাবতীয় প্রচারমাধ্যম থেকেও। কিন্তু হল না শেষরক্ষা। ৬-৪ ফলে পরাজিত হয়ে এবছর আর পদক নিয়ে ঘরে ফেরা হল না তাঁর। তবে চেষ্টার তো নেই কোনো বিকল্প! এবছর না হলেও, আগামী বছরগুলোর জন্য ফের পদকের আশায় বুক বাঁধছে বাঙালি। তবে একটি বিষয় না বললেই নয়। অলিম্পিকে পৌঁছনোর পরে নয়, জিততে হলে এই বিপুল জনসমর্থন প্রয়োজন প্রস্তুতিপর্ব থেকেই। এবছর বঙ্গসন্তানদের কঠিন লড়াইকে শ্রদ্ধা এবং সমর্থন জানিয়ে আগামী দিনে সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ব আমরাও, এই আশা রাখি!
Discussion about this post