পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশের জঙ্গলে বন্য হাতিদের জন্য এক বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বনদপ্তর ২২টি নির্দিষ্ট বনাঞ্চলে ‘মাইক্রোহ্যাবিট্যাট’ (Microhabitat) তৈরি করছে, যেখানে হাতিরা তাদের প্রিয় ফল, ঘাস, বাঁশ, ছাল খেতে পারবে এবং বড় বড় পুকুরে স্নান করতে পারবে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল হাতিদের জঙ্গলের মধ্যেই রাখা, যাতে তারা মানুষের বসতিতে প্রবেশ না করে। এর ফলে মানুষ-হাতির সংঘর্ষ কমবে, ফসলের ক্ষতি কমবে, হাতি ও মানুষের প্রাণহানি রোধ করা যাবে।
এই প্রকল্পের আওতায় পড়ছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার ২২টি নির্দিষ্ট বনাঞ্চল। এসব অঞ্চলে মহুয়া, আম, বেল, বট, নিম, বাঁশ, শিমুল, কলাগাছসহ বিভিন্ন গাছের চারা লাগানো হবে, যা হাতির প্রিয় খাদ্য। রাজ্যের মুখ্য বনসংরক্ষক এস. কুলানদাইভেল জানিয়েছেন যে এলাকাগুলিতে হাতির খাওয়ার উপযোগী গাছ রয়েছে, আরও গাছ ও বিশেষ ধরনের ঘাস লাগানো হবে। বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে কাজ শুরু হয়েছে।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে খোঁড়া হবে জলাশয়। এগুলি হাতিদের জলের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করবে। কুলানদাইভেলের মতে মাইক্রোহ্যাবিট্যাটগুলি সম্পূর্ণভাবে তৈরি হতে পাঁচ বছর সময় লাগবে। এটি হাতি ও মানুষের জন্য একসঙ্গে লাভজনক হবে। বাঁকুড়ার বরজোড়া বনাঞ্চলে আগে থেকেই সাতটি পুকুর থাকায়, সেখানে হাতিরা মানুষের বসতিতে প্রবেশ করছে না বলে লক্ষ্য করা গেছে।
রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা জানিয়েছেন যে সরকার হাতিদের জঙ্গলে রাখতে সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে—জঙ্গলে অযথা প্রবেশ করা বা আতঙ্কিত হয়ে হাতিকে তাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। তিনি আরও জানান, এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকার সচেতনতামূলক প্রচারও চালাচ্ছে। প্রতিবছর হাতির লোকালয়ে ঢুকে ফসল নষ্ট করা এবং মানুষের মৃত্যু ঘটানোর ঘটনা ঘটে। গত আগস্টে ঝাড়গ্রামে একটি অন্তঃসত্ত্বা হাতি ‘হুলা পার্টি’র আক্রমণে গুরুতর আহত হয়ে মারা যায়। এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সরকার পরিকল্পিতভাবে হাতিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করছে।
Discussion about this post