সদ্য শেষ হয়েছে দেবীপক্ষ। মা তার সন্তানদেরকে নিয়ে ফিরে গেছেন কৈলাসে। তাই প্রতি বছরের মতই আপামর বাঙালির মন বিষাদময়। এই বিষাদের মেঘ কাটিয়ে দুর্গাপুজোর মতই বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল মেতে ওঠে কালীপুজোর আনন্দে। সেরকমই এক ঐতিহ্যবাহী মন্দির হল তমলুক মহকুমার বর্গভীমা কালীর মন্দিরটি। তমলুক মহকুমার মন্দিররাজির মধ্যে এই মন্দিরটি বেশ প্রাচীন। কথিত আছে, সতীর একান্ন পীঠের একটি পীঠ হল তমলুকের এই বর্গভীমার মন্দির। নিত্যপুজোর পাশাপাশি বিশেষ দিনগুলোতে বিশেষ রূপে পূজিত হন এই দেবী বর্গভীমা। কালীপুজোর দিনেও কালী রূপে তিথি অনুসারে বিশেষভাবে পূজিত হন দেবী।
কালীপুজোর দিন দেবী বর্গভীমা নতুন রাজবেশে সজ্জিত হয়ে ওঠেন। তন্ত্র মতে বিশেষভাবে পূজিত হন দেবী। ভোগে শোলমাছ ছাড়াও পাঁচ রকমের মাছ, পাঁচ ধরনের ভাজা, পাঁচ রকমের তরকারি দেওয়া হয়। বাদ যায় না ভাত, পোলাও, খিচুড়ি এবং নানান পদের মিষ্টিও। এমনকি তমলুকের সমস্ত পুজো উদ্যোক্তারা কালী পুজোর দিন সন্ধ্যেবেলায় বর্গভীমার পুজো না দিয়ে তাদের পুজো শুরু করেন না। রীতিমতো শোভাযাত্রা করে দেবী বর্গভীমার পুজো দিয়ে তারপর শহরের অন্যান্য পুজো শুরু হয়।
পুরাণ মতে এখানে দেবীর বাম পায়ের গোড়ালি পড়েছিল। তমলুকের এই বর্গভীমা মন্দির প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে নানান অলৌকিক কাহিনি। মনে করা হয়, তমলুকের ময়ূর বংশীয় রাজা স্বপ্নাদেশে দেবীকে দেখতে পান। তারপর সেখানেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজকে দেবী বর্গভীমা রূপে পরিচিত। কারও কারও মতে, জাগ্রতা দেবীমূর্তির ভয়াল রূপ দেখে মারাঠা বর্গীরা এই নগরে হানা দিতে পারেনি। সেই থেকে নাম হয় বর্গীভীমা এবং পরে তা বর্গভীমা নামে নামাঙ্কিত হয়।
তবে শুধুমাত্র বিশেষ দিনগুলোতে নয়, দেবী এখানে সারা বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন। এখনো বহু দূর-দূরান্ত ভক্তরা ছুটে আসেন মায়ের টানে। অলৌকিক কাহিনির পাশাপাশি ঐতিহাসিক দিক থেকেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় এই মন্দির। মন্দিরের সেবাইতদের কথায়, স্বাধীনতা আন্দোলনের কালে একসময় তমলুকে এসেছিলেন স্বয়ং সুভাষ চন্দ্র বসু। তিনি বিপ্লবীদের সঙ্গে বৈঠক করার আগে দেবী বর্গভীমার কাছে আন্দোলনের সাফল্য কামনায় পুজো দেন। তারপর তিনি তার কর্মসূচিতে অংশ নেন। করোনা কালে বিগত দু-বছর নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে পুজো সম্পন্ন হলেও এ বছর আবার মায়ের জৌলুসময় রূপ দেখতে ভক্তদের সমাগমে মেতে উঠবে মন্দির চত্বর। এই মুহূর্তে এমন আকাঙ্খাই প্রত্যাশিত।
Discussion about this post