অমানবিকতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত। খোদ শহর কলকাতার বুকেই। যেখানে নাকি তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ মানুষের বাস। কিছুদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গের এক মহিলা বিডিওকে নিজেরই পাড়াতে এবং নিজেরই ফ্ল্যাটে ঢুকতে বাধা দেন তাঁর প্রতিবেশীরা। কারণ বিডিও অফিসের কিছু কর্মী করোনা পজিটিভ। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে শেষমেশ তা সামাল দেন। আবারও সেই একই কান্ড। তিন বছরের বাচ্চা সহ এক পরিবারের তিনজনের মধ্যে করোনা পজিটিভ একজন। সেই সঙ্গে পজিটিভ তাদের সর্বক্ষণের আয়াও। পরিবারের বাকি দুই সদস্য যদিও নেগেটিভ। কিন্তু তাতে কি! তাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছেন তাদেরই দুই প্রতিবেশী। অত্যাচারিতদের মধ্যে আবার এক সন্তান সম্ভবাও মহিলাও রয়েছেন। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা আর কে করে! পরিবারের কিছুজনের শরীরে মিলেছে করোনা ভাইরাস, তাই তাদের পুরো পরিবারেরই প্রাপ্য শুধুই লাঞ্ছনা। অভিযোগের ঘটনাস্থল গড়িয়ার পাটুলি।
পাটুলির এক দম্পতি হীরক নাগ ও সোমা নাগ এবং তাদের তিন বছরের ছেলের কোভিড পরীক্ষা করা হলে হীরক বাবুর পজিটিভ রেজাল্ট আসে। পজিটিভ রেজাল্ট আসে তাদের বাড়িতে কর্মরতা আয়ারও। সোমা দেবী এবং তার তিন বছরের ছেলে যদিও নেগেটিভ। তিনি আবার পাঁচ মাসের সন্তান সম্ভবাও। এই অবস্থায় তাদের সহানুভূতি দেখানো তো দূরের কথা, বরং তাদের সঙ্গে রীতিমতো অমানবিক আচরণ করে চলেছেন দুই প্রতিবেশী অনির্বাণ ঘোষ এবং তার বাবা অশোক ঘোষ। হীরক বাবুরা করোনা আক্রান্ত জানার পরই তাদের বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছেন অশোক বাবু ও তার ছেলে। তাদের দাবী না মানায় অশোক বাবুরা হীরক নাগকে জুতো দিয়ে পিটিয়েছেন বলেও অভিযোগ। এমনকি সোমা দেবীকেও নাকি ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এমনটাই জানান সেই দম্পতি। এছাড়াও তাদের বাড়ির সামনে তেল ফেলে রাখা হয় যাতে তারা পিছলে পড়ে যান। এভাবে দিনের পর দিন ধরে একই রকম অত্যাচার করে চলেছে।
‘ডেইলি নিউজ রিল’-এর সঙ্গে কথাবার্তায় সোমা দেবী জানান, পজিটিভ রেজাল্ট আসার পরই সব রকম সাবধানতা তাঁরা অবলম্বন করে চলছেন। নিয়ম মেনে হোম কোয়ারেন্টাইনেও থাকছেন তাঁরা। তবু দিন দিন বেড়ে চলেছে অত্যাচার। সহ্যের সীমা অতিক্রম হলে অশোক ঘোষ এবং তার ছেলে অনির্বাণ ঘোষের নামে মেলের মাধ্যমে পুলিশে অভিযোগ করেন তাঁরা। তবে পুলিশ নাকি এখনও কোনও রকম সহযোগিতা করেনি। এমনকি থানাতে গেলেও তাঁদের নাকি সেখানে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। নেওয়া হয়নি কোনও লিখিত অভিযোগও। স্থানীয় কাউন্সিলর কিংবা প্রশাসন, এখনও পর্যন্ত কারোর কাছ থেকেই কোনও সাহায্য পাননি বলেও জানান তাঁরা। এখন প্রশ্ন উঠছে অজস্র! কোভিড আক্রান্তদের তাহলে ভবিষ্যতই বা কী? যেখানে নিজের পাড়া, নিজের ফ্ল্যাটেই তাদের সহ্য করতে হচ্ছে এই অত্যাচার! মানুষজন কি এতটাই অমানবিক? সামান্য সহানুভূতিও তারা দেখাতে পারেন না? প্রশাসন ব্যবস্থাই বা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ করে রয়েছে কেন? দোষীদের শাস্তি কি আদৌ হবে না? এসব প্রশ্নকে সঙ্গী করেই এখন দিন কাটছে সোমা দেবীদের। উত্তর কবে মিলবে তা কেই বা জানে!
‘ডেইলি নিউজ রিল’ কথা বলল, অনির্বাণ ঘোষের স্ত্রী অলিভিয়া ঘোষ বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি হীরক বাবুদের সেই অভিযোগ এককথায় নাকচ করেন। সেই সঙ্গে আরও জানান, মিথ্যা অভিযোগ আনান হয়েছে তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরের ওপর। পুলিশী তদন্ত শেষ হলেই সত্যি সামনে আসবে। করোনা পজিটিভ জানান পরেও হীরক বাবুরা সর্বত্র ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছেন।
Discussion about this post