গত প্রায় দেড় মাস ধরে নিখোঁজ বাংলাদেশের বিখ্যাত আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজল। ১০ মার্চ, মঙ্গলবার নিখোঁজ হন তিনি। মাগুরার সাংসদ দলীয় সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর তার বিরুদ্ধে মামলা করার পরদিনই থেকেই আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। এই মর্মে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার চকবাজার থানায় একটি জিডিও করেছিলেন কাজলের স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী। কিন্তু দীর্ঘকালীন প্রচেষ্টার পরও এখনও পর্যন্ত তাঁর কোনও খোঁজ পুলিশ পায়নি। স্বভাবতই রোজকার উদ্বেগের মধ্যেই দিন কাটছে কাজলের পরিবারের।
আলোকচিত্রী কাজল ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। বর্তমানে দৈনিক পক্ষকাল নামক এক পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে কাজ করছিলেন তিনি। যাসদের মেহেরপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি। ঘটনার দিন দুপুরে ছোট মেয়েকে স্কুল থেকে তাঁর বক্সী বাজারের বাড়িতে রেখে দুপুর আড়াইটে নাগাদ অফিসে যান কাজল। সন্ধ্যে সাড়ে ৬ টায় অফিস থেকে বের হন তিনি। তারপর থেকেই তাঁর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁর কাছে থাকা মোবাইল ফোন দুটিও বন্ধ। এমনকি সঙ্গে থাকা মোটরবাইকেরও কোনও হদিস মেলেনি। কাজল নিখোঁজের ঠিক পরই একটি খবর আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে। সেটি হল নিখোঁজের ঠিক একদিন আগেই তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানীর শের-এ-বাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তার মামলা করেন সাইফুজ্জামান শিখর। যুব মহিলা লিগের বহিষ্কৃত সদস্য শামিমা নূর পাপিয়া পশ্চিম ঢাকার কোনও এক জায়গায় এসকর্ট সার্ভিস চালাতেন বলেও অভিযোগ। তার সঙ্গে মিশতেন বিভিন্ন নামী মানুষ। মানব জমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ও রিপোর্টার আল-আমিন তারই এক তালিকা বানান। সেটি কাজলও শেয়ার করেন। এই তালিকাতেই নাম ছিল সাইফুজ্জামান শিখরেরও। এর পরিণামে কাজল সহ আরও ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন শিখর। যদিও মামলার এজাহারে কাজলের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগের উল্লেখ ছিল না। এমনকি কাজলের পরিবারের মতে এই মামলার কথা তিনি নিজেও জানতেন না।
কাজলের এই হঠাৎ নিখোঁজে উদ্বেগের প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন । তাঁকে দ্রুত খুঁজে বের করার দাবী জানিয়ে লেখক-আলোকচিত্রী-মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, শিল্পী ও মানবাধিকার কর্মী অরূপ রাহী, লেখক ও পরিচালক আশফাক নিপুণ, আলোকচিত্রী ও রাজনীতিবিদ তাসলিমা আখতাররা প্রতিবাদে রাস্তায়ও নেমেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একটি ‘অনলাইন হিউম্যান চেইন’ বানিয়ে এই প্রতিবাদে নিজেদের সামিল করেছেন তাঁরা। এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে চক বাজার থানার চিফ পুলিশ মৌদুদ হাওলাদারের বক্তব্য, তারা সাধ্যমত চেষ্টা করছেন কাজলকে খুঁজে বের করার। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও আশার আলোই তাঁরা দেখাতে পারেননি। কাজলের নিখোঁজের ঘটনায় সবার মনে একটা প্রশ্ন কিন্তু উঁকি দিয়েই যাচ্ছে। ঠিক কীসের জন্য নিখোঁজ হতে হল তাঁকে? তবে কি বিভিন্ন রাজনৈতিক অনাচারের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছিলেন বলেই কি এই পরিস্থিতির শিকার তিনি? সেই উত্তরের খোঁজেই এখন অপেক্ষা করে আছেন কাজলের পরিবার সহ গোটা বাংলাদেশ।
Discussion about this post