ঘুমন্ত মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে বাবা বলছেন, “তোমার বন্ধুরা রাস্তায়, আর তুমি ঘুমোচ্ছ? ওঠো, যাও!” মৃত সন্তানের ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিয়ে মা বলছেন ‘বিচার চাই’। শহরের সমস্ত রিকশাচালকেরা একত্র হয়ে ছাত্রছাত্রীদের হয়ে মিলিত স্লোগান তুলছেন। ট্যাঙ্কার, উদ্যত বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিচ্ছেন শয়ে শয়ে ছাত্র ছাত্রী। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছেলেমেয়েদের লাশ। গুলিতে বিদ্ধ কারো কপাল, কারো সারা শরীর ঝাঁঝরা, কারো খুলি নেই, কারো শরীর দুমড়ে দিয়েছে ট্যাঙ্কার বা পুলিশের গাড়ি। তবু আন্দোলন থামছে না কিছুতেই, কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের।
‘শ্রেণিহীন সমাজের চির বাসনায়’ সচেতন মানুষ বারবার সাড়া দিয়েছেন। কিন্তু এবার গর্জে উঠেছেন সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা। বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত সপ্তাহে। এখন তা গৃহযুদ্ধের রূপ নিয়েছে। সচেতনভাবে তাঁরা নিজেদের ‘সাধারণ ছাত্রছাত্রী’ বলে দাবি করেছেন। তাঁদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। সমাজ-রাজনীতি নির্বিশেষে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরই একটাই দাবি। বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার অবসান হোক।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করেন৷ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর, জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে এই কোটা বাতিল করে দেন৷ কিন্তু, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য আবারও কোটা চালু করেন৷ আন্দোলনকারীদের দাবি এই কোটার প্রয়োজনীয়তা এবং প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে, উলটে বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে বিচ্ছিন্নভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলন চললেও, এই বছরে তা সারা দেশব্যাপী ব্যাপকতা লাভ করল। মানুষের মিলিত হুঙ্কারে এক অর্থে পর্যুদস্ত বাংলাদেশ সরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা পৃথিবীর তাবড় তাবড় স্বৈরাচারী শাসকদের নামের সঙ্গে শেখ হাসিনার নাম এবার একসঙ্গে উচ্চারিত হতে চলেছে। শুধুমাত্র ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের উপর সরকারি পুলিশের অত্যাচার দেখে শিহরিত বিশ্ব। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের থামাতে আরও কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এখনও পর্যন্ত ১০৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। পরিস্থিতি সামলাতে দেশজুড়ে চালু হয়েছে কারফিউ, নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। শেষপর্যন্ত ছাত্রসমাজের হাত ধরে বাংলাদেশে বসন্ত কী নামবে? নাকি শিক্ষা ও সমাজের স্টিয়ারিং থেকে যাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতেই, থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন।
Discussion about this post