পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার মৃৎশিল্প পল্লী। বৈশাখী মেলার রঙিন আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে, আর সেই আনন্দঘন পরিবেশে দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন এখানকার মৃৎশিল্পীরা। শিশুদের আনন্দের কথা ভেবে তারা তৈরি করছেন নানা ধরণের মাটির খেলনা—ঘোড়া, হাতি, পাখি, পুতুল থেকে শুরু করে কলসি, হাঁড়ি, বাসন-কোসনের ক্ষুদ্র প্রতিরূপ পর্যন্ত। মেলার মৌসুমি চাহিদা মেটাতে এখন তাদের কারখানাগুলোয় চলছে কর্মব্যস্ততা। কাঁচামাটি সংগ্রহ, ছাঁচে ফেলে গড়ন, রোদে শুকানো এবং শেষে রঙে রাঙানোর প্রতিটি ধাপে লাগছে বাড়তি মনোযোগ।

কেউ রঙ তুলিতে মেতে আছেন, কেউ আবার জ্বলন্ত চুল্লির পাশে দাঁড়িয়ে খেলনাগুলো পোড়ানোর কাজে ব্যস্ত। পরিবার-পরিজনসহ একসঙ্গে কাজ করছেন সবাই। এই সময়টিই তাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রির মৌসুম। তবে মৃৎশিল্পীদের অনেকেই আক্ষেপ করে বলছেন, আগের তুলনায় এখন শিশুদের মধ্যে মাটির খেলনার প্রতি আগ্রহ কিছুটা কমেছে। প্লাস্টিক আর চীনা পণ্যের আগ্রাসনে বাজারে তাদের জায়গা সংকুচিত হয়েছে। তারপরও বৈশাখী মেলা এখনও একমাত্র উপলক্ষ্য, যখন তারা একটু স্বস্তি পান এবং বছরের অন্য সময়ে যে ক্ষতিগুলো হয় তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারেন।

স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকেও পাইকাররা এসে খেলনা কিনে নিয়ে যান। ফলে কাকিনা গ্রামের মাটির খেলনাগুলো পৌঁছে যায় দেশের নানা প্রান্তে। মেলার দিনগুলোতে এ খেলনাগুলোর চাহিদা যেমন থাকে তুঙ্গে, তেমনি ছোটদের হাসিমুখ দেখেই যেন শিল্পীরা তাদের শ্রমের পরিপূর্ণ মূল্য খুঁজে পান। এইভাবেই বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আর বৈশাখী মেলার আবহ মিলেমিশে এক আত্মিক বন্ধনে বাঁধা পড়ে, যা আমাদেরকে শিকড়ের সাথেই যেন আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত করে।
চিত্র ঋণ – মোঃ হাসানুজ্জামান হৃদয়
Discussion about this post