পরিবেশ আমাদের উজাড় করে দিয়েছে তাজা বায়ু, বিশুদ্ধ জল, উর্বর ভূমি ইত্যাদি। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই পরিবেশ ও প্রাণী জগৎ একসূত্রে গাঁথা। তবুও আমরা যতই উন্নতির পথে অগ্রসর হয়েছি ততই পরিবেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে খারাপ করেছি। “বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল” বাংলার প্রকৃতি তথা বিশ্ব প্রকৃতির হাতে হাত রেখে প্রকৃতি রক্ষার্থে অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বঙ্গতনয়া পাপিয়া কর।
গত ১৪বছর ধরে পরিবেশ দিবস দিনটিতে এক নতুন বার্তা দিচ্ছেন আমাদের এই প্রকৃতি সেবিকা। হ্যাঁ, সেবিকাই বটে! পরিবেশ দূষণ একটা গুরুতর সমস্যা । আজ মানব সভ্যতার অস্তিত্ব বিঘ্নিত। এই গভীর সঙ্কটের মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রত্যেকেই সচেতন হতে হবে এবং নজর দিতে হবে যাতে পরিবেশের দুষণের মাত্রা না বাড়ে। কারণ বিজ্ঞান যতই উন্নত হোক বা প্রযুক্তি বিজ্ঞান যতই আমাদের উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যাক না কেন মানুষের জন্যে সভ্যতা মানুষের হাতেই যদি বিনাশ হয় তাহলে কি লাভ? বনে আগুন লাগলে দেবালয় কি এড়ায়? এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে আমাদের সবাইকেই হাত মিলিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়তে হবে। এই ভাবনা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই তিনি নিজের হাতে বানিয়ে ফেলেছেন ৫০০ সিড বল। আম, জাম, লিচু, বট, অর্জুন, অশ্বত্থ প্রভৃতি গাছের বীজ কাদামাটি ও গোবরের মন্ডের আবরণ দিয়ে তা শুকিয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিস্তীর্ণ জমিতে। যেখানে বৃক্ষ শিশু নিশ্চন্তে অঙ্কুরিত হতে পারবে।
পাপিয়া করের কথায় “৫০০ সিডবল ছড়ালে অন্তত ২০০ গাছ মাথা তুলবে। পরিবেশ প্রতিকার বা পরিবেশের প্রতি দায়িত্ব কেবল একদিনের কাজ নয়, আমাদের সবাইকে হাতে হাত রেখে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে”। নগরায়নের প্রয়োজনে আমাদের গাছ কাটতে তবে সেই ক্ষতি পূরণের উদ্যোগ আমাদেরই নিতে হবে। “গাছের জীবন মানুষের জীবনের ছায়ামাত্র।” মা যেমন সন্তানকে পরম স্নেহে কোলে তুলে নেয় এবং সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে সন্তানকে আড়াল করে তাকে লালিত পালিত করে, বিশ্ব প্রকৃতিও তেমনই গাছের বীজকে সন্তান স্নেহে কোলে তুলে নেয়। তার ধুলাে ও মাটি দ্বারা তাকে আবৃত করে রাখে এবং শীত ও ঝড়ের হাত থেকে তাকে রক্ষা করে। মায়ের মতাে বিশ্বপ্রকৃতিও বীজরূপী সন্তানকে ধীরে ধীরে জল-আলাে-বাতাস ও মাটি দ্বারা ছােট্ট চারা গাছ থেকে বৃহৎ বৃক্ষে পরিণত করে। এভাবে বিশ্বপ্রকৃতি যথার্থ মায়ের ভূমিকা পালন করে। আর এই কর্মোদ্যোগের অনুপ্রেরণা আমার আপনার একজন- পাপিয়া। তার এই মহান উদ্দেশ্যের অংশিদার কি আমরা হতে পারি না?
Discussion about this post