ছোট্ট দু’টো চোখ আর বেশ বড়ো দু’টি কান, লম্বা একখানা শুঁড়ের পাশ দিয়ে নীচের দিকে দু’টো ইয়াব্বড় দাঁত বেরিয়ে আছে। ভারী শরীরে দু’টো এই ছোট চোখ দেখে সকলেরই মন আল্পুত হয়ে ওঠে! কী মিষ্টিই না দেখতে। অবশ্যই এতক্ষণে বুঝে গেছেন কার কথা বলা হতে চলেছে! আজ্ঞে হ্যাঁ, ছোটদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় সেই প্রাণীটি হলো ‘ডাম্বো’ থুড়ি হাতি। বড়দের কাছে তারাই আবার ‘ঐরাবত’। তবে দেখতে অত্যন্ত শান্ত হলেও জঙ্গলের অন্যতম শক্তিশালী প্রাণী হল এই হাতিরা। এদের দলকে দেখলে খোদ জঙ্গলের রাজাও সন্মান দেন। বুদ্ধির দিকেও বেশ এগিয়ে ঐরাবতের দল! এমনকী রং তুলি হাতে থুড়ি শুঁড়ে নিয়ে কাঁপিয়ে ফেলে ক্যানভাসও।
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে অনেকেই হয় তো আঁকিয়ে হাতি সম্বন্ধে ইতিমধ্যেই জেনে ফেলেছি। তবে অনেকেই হয় তো এটা জানেনা যে এর পিছনে কতটা বর্বরতা চাপা আছে। থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় একটি শো হল হাতিদের দিয়ে ছবি আঁকানো। তবে এসবই হয় হাতিদের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করার বিনিময়ে। হাতিদের পক্ষে কোনোভাবেই প্রথমে শুঁড় বেঁকিয়ে তুলি ধরার ক্ষমতা থাকে না। তাদের রীতিমতো দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দিতে হয়৷ আর এই প্রশিক্ষণ পর্বেই চলে তাদের জোর করে তুলি ধরা শেখানোর জন্য নির্মম মারধোর। এ তো গেল তুলি ধরা শেখানো। কিন্তু আসল কাজ তো ছবি আঁকানো! একইভাবে রীতিমতো জোর করে তাদের দিয়ে এক এক করে সোজা লাইন টানা, ফুল পাতা আঁকা শেখানো হয়৷ মুখে পেইন্ট ব্রাশ ধরিয়ে শক্ত করে কান ধরে তাদের মাথা এদিক নাড়িয়ে শেখানো হয় ছবি। ব্যাস আর কী! একবার হাতি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে সে তৈরি লক্ষাধিক টাকায় নিজের প্রতিভার নিদর্শনগুলো বিক্রি করার জন্য। বলা বাহুল্য শুধু দৃশ্যটুকু ভাবলেই কেমন গা শিউরে উঠে।
আসলেই তো “বন্যেরা বনে সুন্দর”। তাদের নিজস্ব জগৎ মানুষের চেয়ে আলাদা। সে সার্কাসই হোক বা হাতিকে দিয়ে ছবি আঁকানো, মানুষ তা বোঝে না। মানুষ সর্বদাই নিজের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে এসেছে পশু পাখিদের ওপর। বারবার প্রকৃতির ক্রোধের শিকার হয়েছি আমরা। আমাদের করা এই অন্যায়ের জন্য যে মনুষ্য প্রজাতিকে কী মূল্য দিতে হয় আমরা তারও সাক্ষী।
Discussion about this post