এই পৃথিবীতে এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটে, সাধারণ বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। কখনও কখনও এমন কিছু রহস্যের সন্ধান মেলে এখানে, তল পাওয়া যার ভারী মুশকিল! শত চেষ্টাতেও সে রহস্যের সমাধান সূত্রের হদিশ মিলবে না। এরকমই কিছু তল না পাওয়া রহস্যে ঘেরা একটি স্থান, অস্ট্রেলিয়ার অ্যারাডেল মানসিক হাসপাতাল। গত ১৩০ বছরে প্রায় ১৩ হাজার মৃত্যু-গাথা লেখা হয়েছে যে হাসপাতাল ঘিরে! কেন? তা আজও সমাধান হয়নি। আজ নজর ফেরাই সেই কাহিনীতেই।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরের অ্যারাডেলে গড়ে উঠেছিল এক মানসিক হাসপাতাল। সেখানে তখন প্রায় হাজার দুই রোগী এবং জনা পাঁচশো চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর দল। সে হাসপাতাল নিজেই যেন একটা গোটা গ্রাম। গির্জা, বিদ্যালয়, সাজানো বাগান প্রায় সবই মজুত ছিল সেখানে। তবে বাইরেটা যত সাজানো, হাসপাতালের ভিতরটা ছিল ঠিক ততটাই অন্ধকার।
১৯২৩ সালে হাসপাতালের সুপার নাকি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। তারপর থেকেই হাসপাতালের আনাচে কানাচে দেখা মিলত তাঁর আত্মার। এমনকি হাসপাতালটির মহিলা বিভাগটির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল নানা ভুতুড়ে গল্প। কেরি নামে এক নার্সের আত্মা নাকি প্রায়শই ঘোরাফেরা করতেন। ওল্ড মার্গারেট নামের আরেক রোগী মারা গেলে তাঁর ছায়ামূর্তিও নাকি দেখেছিলেন বাকিরা। এছাড়াও রাত গভীর হলেই শোনা যেত নানা ফিসফাস শব্দ এবং কান্নার আওয়াজ।
মানসিক প্রতিবন্ধী রোগীর সঙ্গেই অটিস্টিক কিছু মানুষ এবং কুখ্যাত নানা অপরাধীরও ঠাঁই ছিল সেই হাসপাতাল। ‘শক থেরাপি’র নাম তো প্রায় সবাই শুনেছেন? বিদ্যুতের শক দিয়ে চিকিৎসা করার এক পদ্ধতি ছিল যেটি চিকিৎসার জন্য রোগীদের ওপর প্রয়োগ করা হত। এছাড়া লোবোটমির মত নৃশংস প্রথাও ব্যবহার করা হত সেখানে। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বহু রোগীই সেসময় প্রাণ হারায়। কেউ আবার আত্মহত্যা করে শেষ করে দেয় নিজেকে। এরমধ্যেই একজন ছিলেন গ্যারি ওয়েব। শোনা যায় ৭০ বারের বেশি নাকি তিনি নিজেকে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। এছাড়াও জে ওয়ার্ড নামে এক রোগী নাকি অন্য একজনকে গুলি করে হত্যাও করেছিলেন। তারপর থেকেই প্রায় অভিশপ্ত হয়ে ওঠে সে হাসপাতাল।
১৯৯০ সালে বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালটি। ‘ঘোস্ট ট্যুর’ হিসাবে তখন এক দর্শনীয় স্থান হয়ে ওঠে সেটি। তবে আজ অবধি যেসব পর্যটক সেই স্থানে গিয়েছেন, প্রত্যেকেই কিছু না কিছু অশরীরী প্রভাব অনুভব করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, আজও নাকি সে হাসপাতাল থেকে ভেসে আসে রোগীদের চিৎকার, অশরীরী কান্নার আওয়াজ। দেওয়ালে মেলে নখের আঁচড়! কেন? নাহ! বিজ্ঞানের কাছেও নেই সে উত্তর। প্যারানর্মাল বিষয় নিয়ে গবেষণা করা বহু গবেষকই এখনও খুলতে পারেননি এ রহস্যের জট। তাহলে কি সত্যিই সেই স্থানে দেখা মেলে অশরীরী? নাকি লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোনও অজানা রহস্য! এ হিসাব যে কবে মিলবে কেই বা বলতে পারে!
Discussion about this post