এমন এক বিচারপতি, যিনি হাসি হাসি মুখে আসামীর থেকে জানতে চান তার দোষের কারণ। তারপর, ঘটনার গাম্ভীর্য, গুরুত্ব, গভীরতা বিচার করে রায় দেন। রায় দেওয়ার সময় কখনও কখনও আবার মাফ করে দেন আসামীর সমস্ত দোষ। তাতেই বিশ্বজোড়া নাম তাঁর। তিনি ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও। আমেরিকান আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিওর হাসিতেই গলে যায় মানুষ। ভাইরাল হয় তাঁর কোর্টরুমের ভিডিও।
বিচারপতি মানেই আমরা জানি গুরুগম্ভীর পরিবেশ, সঙ্গে গুরুগম্ভীর নিয়ম। বিচারপতির বিজ্ঞ আর বিরস মুখ। কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক এসবের একেবারেই উল্টো। কখনও তিনি মায়াভরা মুখে অভিযুক্তকে পর্যবেক্ষণ করেন, কখনও তিনি ধমকে ওঠেন, কখনও বা কোর্টরুমে আসা কোনো শিশুকে পাশে বসিয়ে কথা বলেন, কখনও বা অভিযুক্তের অকপট স্বীকারোক্তি বা অসহায়তার কথা শুনে ভিজে ওঠে তাঁর দুই চোখ। যেখানে আমাদের দেশ সহ অন্যান্য যেকোনো অঞ্চলে বিচারব্যবস্থা থেকে শুরু করে সংবাদ মাধ্যম সবটাই ভীষণ অসংবেদনশীলভাবে দোষী বা অভিযুক্তের দিকে আঙুল তোলে, সেখানে যিনি অপরাধীর বিচার করবেন, তাঁর আসলে এমনটাই হওয়ার কথা নয় কি?
ফ্র্যাঙ্কের জন্ম হয়েছিল ১৯৩৬ সালে আমেরিকায়। ফ্র্যাঙ্ক আমেরিকানিবাসী হলেও, বংশগত ভাবে তিনি ইতালীয়। তাঁর বাবা এবং মা দুজনেই ইতালীর অভিবাসী। তাঁর বাবা ফল ও দুধের ব্যবসা করতেন। যুবক ফ্র্যাঙ্কও পড়াশোনা করতে করতে রেস্তোরাঁতে কাজ করেছেন। ১৯৫৩ সালে তিনি একটি কুস্তির প্রতিযোগিতাতে জয়ী হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি শিক্ষকতার চাকরি নেন। তারও পরে তিনি ঝোঁকেন আইনের দিকে, পা রেখেছেন রাজনীতির আঙিনাতেও। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি প্রভিডেন্স মিউনিসিপ্যাল কোর্টের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর এই কোর্টরুমের কাজের কিছু অংশ স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল।
এই ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও ৮৭ বছর বয়সে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে অবসর গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি তাঁর একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ৯৬ বছরের এক বৃদ্ধকে তিনি অপরাধের কারণ জানার পরে জেল থেকে রেহাই দিচ্ছেন। আদালতে হাজির হয়ে সেই বৃদ্ধ জানিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর ৬৩ বছরের ছেলেকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির নির্ধারিত গতির মাত্রা লঙ্ঘন করে ফেলেছেন। সেই শুনে ফ্র্যাঙ্কের চোখ জলে ভরে ওঠে, কথা বলতে গিয়ে স্বর কেঁপে যায়। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি পরিচিত ‘World’s nicest judge’, অর্থাৎ পৃথিবীর সবচেয়ে দয়ালু বা মানবিক বিচারক নামে। তিনি তাঁর কাজের মধ্য দিয়েই এই নামের সার্থকতা বজায় রেখে চলেছেন।
Discussion about this post