শীতকাল আর মেলা একেবারে সমানুপাতিক শব্দ। মেলা সকলের প্রাণের উৎসবও বটে। গোটা বছর জুড়ে রথের মেলা, বারুণী মেলা থেকে শুরু করে পৌষ মেলা, বইমেলা চলতেই থাকে। মেলায় মানুষের প্রাচুর্য প্রাঙ্গণের চেয়ে বেশি উষ্ণতা ছড়ায় মানুষের মনে। এও যেন এক প্রকার পুজো। মিলন উৎসব। পাঠ্য বইয়ের পাতা ছেড়ে বাইরের প্রাঙ্গণে বিশাল ব্যাপ্তি জুড়েই চলতে থাকে নানান মেলার পর্ব। নাগরদোলা, খাবারের দোকান ইত্যাদি নিয়ে মেলা তো বসেই থাকে। তবে খাবার ঘিরেই যদি মেলা চলে, ব্যাপারটা কেমন হয়?
ঠিক এমনটাই হয়ে আসছে হাওড়ার রাজাপুর এলাকায়। উদয়নারায়ণপুরের কাছাকাছি জায়গা রাজাপুর। এখানে মাঘ মাসের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয় এক বিরাট মেলা। আলুর দমের মেলা। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবার জো নেই। মাঠ পেরিয়ে হাজার মানুষের ভিড়। সেদিন যতো দূর চোখ যাবে আলু আর সর্ষে ক্ষেতের আল ধরে শুধু সারি সারি কালো মাথা। মেলাটি অনেক শতাব্দীর সাক্ষী। সুফি সাধক ভাই খাঁ’র নামে এক পীর ছিলেন। তার নামেই দরগা মাঠের নির্জন স্থানে। শোনা যায়, সাধকরা শ্যামা গানের মাধ্যমে অতীন্দ্রীয় চর্চা করতেন। তাঁদের হাত ধরেই হিন্দু মুসলিম একসঙ্গে দরগাতে উপাসনা করতো। তাই এই স্থান এক সম্প্রীতির মঞ্চও বলা চলে। তবে ভক্তরা এখানে পুজো দেন না। বরং চাদর জড়ান মাজারে। অফুরন্ত মাঠে পীরের দরগায় বসে মেলা।
আগেকার দিনে ভাইয়েরা নদীপথে বাণিজ্যে গেলে বোনেরা তাদের মঙ্গল কামনায় দীঘি বা নদীর জলে কলাগাছের তৈরি নৌকো ভাসাতো। এদিনেও সেই ঐতিহ্য কে মাথায় রেখে বাড়ির মেয়েরা এখানে কলাগাছের থেকে প্রস্তুত নৌকা নদীতে ভাসায়। এদিকে গোটা মেলা জুড়ে শুধু আলুর দমের দোকান। এই মেলার এটাই বৈশিষ্ট্য। মাঘের শীত বাঘের গায়ে দিয়েই দলে দলে মানুষের ভিড়। আল পথ জুড়ে রোদ মাখতে মাখতে হয়তো বা কেউ মুড়ি চিবোচ্ছেন। এমনই দৃশ্য দেখা যায় এই মেলায়। আর মেলায় থরে থরে সাজানো আলুর দমের হাঁড়ি। দাম একই। একেবারে নিরামিষ আলুর দম। হলুদ, লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে সেদ্ধ আলু। সেটাই নাকি স্বাদে অতুলনীয়। এর টানেই দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন বহু মানুষজন। আলুর দমের পাশাপাশি বিক্রি হয় কাঁকড়াও।
Discussion about this post