মেয়েটাকে তো অনেকদিন আগেই মেরে দিয়েছিল। আজ দুপুর ১টায় ঘোষণা হল মাত্র। ১টা ৫মিনিটের মধ্যেই আমার ফেসবুক প্রোফাইল হয়ে উঠল ঐন্দ্রিলাময়। ১-২ মিনিটের শট ভিডিও, সব্যসাচী ঐন্দ্রিলার একসাথে পথচলার পাঁচালি, তাদের কিছু সুন্দর ছবিতে ভরে গেল প্রোফাইল৷ কেউ কেউ নামিয়েছে লম্বা হ্যাজ। ২ মিনিটের মধ্যে মেইন স্ট্রিম মিডিয়াগুলো তো ঐন্দ্রিলার বায়োগ্রাফী নামিয়ে দিল। একদম পারফেক্ট, কোন ভুল নেই। স্বাধীন ইউটিউব চ্যানেল গুলো ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর অভিনয়ের ছবিকেই থাম্বেলে ঠাঁই দিল৷ সঙ্গে লেখা ‘মারা গেল ঐন্দ্রিলা’।
আমি ভুল খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছিলাম, মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে এতো সুন্দর সুন্দর এডিটেড ভিডিও বানানো যায় নাকি৷ তারপর মনে পড়ল কেভিন কার্টারের তোলা সেই কালজয়ী ছবিটার কথা, এক অভুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ শিশু মাটিতে পড়ে আছে আর শিশুটার পাশে একটা শকুন অপেক্ষা করছে৷ শিশুটা মরলেই শকুনের পৌষমাস। সব আগে থেকেই এডিট করে ঠিক করা ছিল, সংবাদ কনফার্ম হতেই উৎসুক আঙুল কি-বোর্ডের পিছনে কাঠি করতে শুরু করে দিল। আজ তো মিডিয়া আর ফুটেজখোরদের পৌষমাস। আসামের এক যুবক তার মৃত স্ত্রীকে সিঁদুর পড়ানোর পুরনো ভিডিওকে সব্যসাচী ঐন্দ্রিলার বলে পোস্ট করে দিল। ক্যাপশনে লেখে মৃত্যু আর ভালোবাসার লড়াইয়ে ভালোবাসা হেরে গেল।
আজ ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচী হয়ে উঠেছেন শিব-পার্বতী, রোমিও-জুলিয়েট, রাধা-কৃষ্ণ। সত্যিই তারা প্রেমের রূপকথা লিখেছেন। আস্তে আস্তে দিন শেষ হয়ে আসছে, সম্পর্কের অথবা জীবনের। তবু একসাথে থেকে যাবার প্রবল ইচ্ছে, হার না মানার প্রতিজ্ঞা। সবটা শেষ হতে চলেছে জেনেও আঁকড়ে ধরার চেষ্টা। বুকটা শূন্য হয়ে যায়, হাতটা থরথর করে কাঁপে, আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসে চোখ, আধঘুমে হঠাৎ তার মুখের প্রতিছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে, ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙে৷ সে এখনো আছে, সম্পর্কে অথবা জীবনে অথবা হৃদয়ে৷ এমন সব্যসাচী আর ঐন্দ্রিলাদের একটা লিস্ট আমার কাছে আছে। যারা দায়িত্ব ছেড়ে পালায়নি, হয়তো তার দায়িত্ব পালনের ক্ষমতাটা নেই তবু নির্লজ্জ বেহায়ার মতো হাতটা বাড়িয়েই রাখে। শোকে পাথর তো সেই হয় যার বাড়ানো হাতটা ধরতে চেয়েও ধরা গেল না। তাই হয়ত চারিদিকে যখন শকুনি আর ফুটেজখোরদের দাপাদাপি ঠিক তখনি সব্যসাচী ৬ লক্ষ ফলোয়ার্সসহ ফেসবুক অ্যাকাউন্টটাই ডিলিট করে দিল। প্রতিটি সব্যসাচী ঐন্দ্রিলারা ভালো থাকুক।
সম্পাদকীয় কলমে – অভিজিৎ দাস
Discussion about this post