অনুপম রয়ের গানের একটা লাইন আছে না? “সব কি ফিরে আসে, সেই পুরনো অভ্যাসে?” হয়তো পুরনো অভ্যেস ফিরে আসে না। তবে পুরনো মানুষ হঠাৎ করেই তো ফিরে আসতে পারে জীবনে। হয়তো কেন, এমনটাই হয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা পিটারের সঙ্গে। যার বয়স প্রায় সত্তর। মহামারী পরিস্থিতিতে মনোবল হারিয়ে তিনি প্রায় মৃত্যুশয্যায়। আর মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছে ৪২ বছর আগের জীবনদাত্রী নার্সের সঙ্গে দেখা করতে চান।
এ প্রসঙ্গে তার জীবন ফিরে পাওয়ার কাহিনীতে একটু আলোকপাত করতেই হয়। ১৯৭৯ সাল। একদিকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আরেকদিকে ব্রিটিশ ইউনিয়নের পক্ষে থাকা মানুষজন। প্রায় ৩০ বছর দু’পক্ষের সংঘাত চলেছে অবিরত। এরম সময়ে একদিন পিটারের বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরে ঢুকে পড়ে রাইফেলধারী কয়েকজন মানুষ। পিটারের স্ত্রী আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়েছে মেঝেতে। আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ পিটার পায়নি।
পিটারের বাড়ির লোকজন ছুটে আসতে আসতে পিটার বডিব্যাগের মধ্যে শায়িত। সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে যান পিটার। এই অবস্থায় এক বছর তিনি কাটান মাসগ্রেভ পার্ক হসপিটালে। কপালের ওপর এক বিন্দু ঘাম মুছতে না পেরে অস্বস্তিতে থাকতেন তিনি। ঠিক সেই সময়ে তার কাছে দেবদূতের মতো আসেন বেৎসি। পিটারের নার্স, যিনি পরম যত্নে সেবা করে পিটারকে এক বছরের মধ্যে সুস্থ করে তোলেন। এরপর তাদের আর দেখা হয়নি। বেৎসিকে সামান্য ধন্যবাদটুকুও জানিয়ে আসতে পারেননি পিটার। হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন তাঁকে।
শেষে পিটারকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে সংবাদ সংস্থা বিবিসি। কয়েক মাসের মধ্যেই খোঁজ মেলে বেৎসির। তিনি এখনো নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন কর্মক্ষেত্রে। ডাউনপেট্রিক অঞ্চলের একটি মানসিক হাসপাতালের নার্স তিনি। আর পিটারের বাড়ি থেকে তার দূরত্ব মাত্র ৬ মাইল। শেষ পর্যন্ত দেখা হলো তাদের। বেৎসিও যেন এতদিন খুঁজছিলো পিটারকে। ৪২ বছর পর যেন হাসির আদানপ্রদান ঘটলো। পিটারের জীবনের শেষ ইচ্ছে অবশেষে পূর্ণ হলো।
Discussion about this post