“Change is the only constant” ঠিক-ই! পৃথিবীতে ‘শাশ্বত’ বলে কিছু নেই। সবটাই পরিবর্তনশীল। চলতি সময়ে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে বোঝা যায়, রীতিমতো বেশ গভীর প্রভাবই ফেলেছে এই পরিবর্তন। বছরের প্রায় শুরু থেকেই বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব এবং তারপর দেশ জুড়ে লকডাউনের ফলে পরিবর্তন ঘটেছে আমাদের সাধারণ জীবনযাত্রাতেও। এই পরিবর্তনের ফলে ঠিক কী কী বদল ঘটেছে? পরিবর্তনকে ঠিক কী নজরেই বা দেখছি আমরা? এসব নিয়েই গান বেঁধে ফেলেছে রাজ্যের একমাত্র সতন্ত্র পোস্ট-রক ব্যান্ড ‘A dot in the sky'(ADTS)। গত সোমবারই মুক্তির আলো দেখেছে তাদের নতুন একক সঙ্গীত ‘Change’
২০১৬ সালে হিমাচলের কাশোলের কাছে কয়েকজন সঙ্গীতপ্রেমী মিলেই গড়ে তুলেছিলেন ‘A dot in the sky'( ADTS)। এটি বাংলার প্রথম ‘পোস্টরক-অ্যাম্বিয়েন্ট’ ব্যান্ড। মূলতঃ ‘পোস্টরক অ্যাম্বিয়েন্ট’ জঁরের ওপর ভিত্তি করেই নিজস্ব শব্দ এবং সঙ্গীতের মাধ্যমে একক সঙ্গীত পরিবেশন করে এই ব্যান্ড। গত সোমবার মুক্তি পেয়েছে তাদেরই নতুন একক অ্যালবাম ‘Change’। চলতি বছরে লকডাউনের মধ্যেই আরও বেশ কিছু একক প্রকাশিত হলেও তাদের থেকে বেশ কিছুটা আলাদাই বলা চলে ‘Change’কে। চলতি সময়ে ঘটে চলা পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করেই মূলতঃ রচিত হয়েছে এই গান।
ব্যান্ডটির মুখ্য নির্বায়ক এবং সঙ্গীত প্রযোজক হলেন সুদীপ্ত পাল। তিনি আবার ব্যান্ডের কিবোর্ডসিস্টও বটে। বাকি সদস্যদের মধ্যে অন্যতম, গায়িকা এবং গীতিকার অ্যানি আহমেদ, মূল গিটারিস্ট শুভজিৎ গোস্বামী, বেস গিটারিস্ট সৌত্রিক ব্যানার্জি এবং ড্রামার দীপায়ন চক্রবর্তী। ADTS-এর প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে ‘ডেইলি নিউজ রিল’-এর কথোপকথনে উঠে এল নানা তথ্য। তাঁরা জবাব দিলেন ব্যান্ডটি ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্নেরও। জেনে নেওয়া যাক সেসব অজানা কথাই…
‘Change’ এককটি ঠিক কী নিয়ে? এর ভাবনাই বা এল কীভাবে?
ADTS-এর তরফে অ্যানি আহমেদঃ “গানটির ভাবনা মাথায় আসে লকডাউনের মধ্যেই। গত মে মাসের এক দুপুরে আমার হঠাৎ মনে হতে থাকে এই যে পরিবর্তন এ কি শুধুই ক্ষনিকের? নাকি দীর্ঘস্থায়ী? বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নিজেকে যেভাবে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলতে হচ্ছে, অচিরেই যা হয়তো এক অভ্যাসে পরিণত হতে চলেছে। যেভাবে জীবনকে দেখতাম, তা প্রায় পুরোটাই এখন বদলে গিয়েছে। এসব চিন্তা-ভাবনার ভীড় থেকেই ‘Change’ এর জন্ম। যার মাধ্যমে আমরা বর্তমান পৃথিবী জুড়ে ঘটে চলা পরিবর্তনের কথাই বলতে চেয়েছি।”
এই সময়ে দাঁড়িয়ে ‘Change’-এর গুরুত্ব ঠিক কতটা?
ADTS-এর তরফে অ্যানি আহমেদঃ “এই সময়ে দাঁড়িয়ে ADTS-এর কাছে এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা। এই মহামারীতে আমাদের জীবন হঠাৎ করেই বেশ বদলে গিয়েছে। জীবনকে অন্যভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। এই ‘নিউ নর্মাল’ পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত আমরা নতুন কিছু উপলব্ধি করছি, শিখছি। আমাদের নতুন এককেও ঠিক এগুলোর কথাই বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ‘Change’ এর মাধ্যমে ADTS এও বোঝাচ্ছে – “The new normal world with the whole new possibilities with positivity”। অর্থাৎ চলতি পরিস্থিতি কঠিন থেকে কঠিনতর হলেও এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নানা উজ্জ্বল সম্ভাবনা। আশাব্যঞ্জক চোখেই সেগুলো আমাদের খুঁজে নিতে হবে।”
করোনা পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই বহু গান মুক্তি পেয়েছে। আলাদা করে আপনাদের ‘Change’ গানটি কেন মানুষ শুনবেন?
ADTS-এর তরফে শুভজিৎ গোস্বামীঃ “আসলে ‘Change’-এর পুরোটাই ইতিবাচক। গানটি মানুষকে একটা ‘পজিটিভ মেসেজ’ দিচ্ছে। চলতি বছরে লকডাউনের ফলে সাধারণ জীবনে বেশ কিছু পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করেছি। সেটা কর্ম জীবনই হোক বা ব্যক্তিগত জীবন। কিন্তু এই যে পরিবর্তনটা হল তার ফলে আমরা কি কিছু উপলব্ধি করলাম? পরিবর্তনের ফলে নতুন করে সব কিছু শুরু করতে চলেছি আমরা। সবটাই নতুন ভাবে। পুরোনো যে যে ভুল আমরা করে এসেছি সেগুলোকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ পেলাম নতুন করে। ফলে নতুন এক দায়িত্ব নিয়েই চলতে হবে আমাদের। আমরা এগিয়ে যাবো আমাদের গন্তব্যের দিকে তবে আরও সচেতন এবং দায়িত্বশীল হয়ে। ঠিক এই কথাগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে ‘Change’ এও। তাই শ্রোতা এর সঙ্গে নিজেকে একাত্ববোধ করতে পারবেন।”
‘Change’ এর এই জার্নিটা ঠিক কী রকম?
ADTS-এর তরফে অ্যানি আহমেদঃ “প্রতি বছরই আমাদের কিছু না কিছু গান মুক্তি পায়৷ ‘Change’ আমাদের নবম একক। ২০১৬ থেকে আমাদের এই ব্যান্ডের শুরু। তারপর থেকেই বছরে ২-৩ গান আমরা প্রকাশ করেই থাকি। ঠিক তেমনই এই লকডাউনের মধ্যেই বাড়িতে বসে আমরা একটি ‘কভার’ গানও প্রকাশ করি। তারপরই ‘Change’-এর ভাবনা মাথায় আসে আমার। এরপর আমি ব্যান্ডের বাকি সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করি। এবং ঠিক করি এটা ঠিক সচরাচর যেমনভাবে আমরা আগের প্রতিটা গান করে এসেছি সেভাবে করব না। এরপর গানটির কথা এবং সুর তৈরি হয়। এবং আমি বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলতে পারি যে এটি সাধারণ মানুষের জীবনে এক গভীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মানুষকে উৎসাহিত করে তুলবে। অনুপ্রেরণাও যোগাবে।”
আপনাদের ব্যান্ড ‘A dot in the Sky’-এর নজির তো ইতিমধ্যেই বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে…
ADTS-এর তরফে সুদীপ্ত পালঃ “হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক কিছু সম্মান আমাদের ঝুলিতে এসেছে ইতিমধ্যেই। নেদারল্যান্ডের একটি ওয়েবসাইট ‘The best off Music’, বিভিন্ন জঁরের আন্তর্জাতিক শিল্পী এবং ব্যান্ডদের সঙ্গে ADTS-এর কাজকেও স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়াও চলতি বছরে আমাদের আরও একটি গান ‘অনেক দূর’ ‘আন্তর্জাতিক শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২০’ তে সেরা সঙ্গীত ভিডিও বিভাগে মনোনীত হয়েছে এবং আমরা প্রথম পুরষ্কারও লাভ করেছে। বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন আন্তর্জাতিক ‘এমি(Emmy) অ্যাওয়ার্ডের বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব।”
শেষ প্রশ্ন, আপনারা যে জঁর নিয়ে কাজ করছেন অর্থাৎ পোস্টরক -অ্যাম্বিয়েন্ট, এর ভবিষ্যৎ ঠিক কী?
দর্শক এটিকে কিভাবে গ্রহণ করছে? ADTS-এর তরফে সুদীপ্ত পালঃ “দেখুন, আমরা যে জঁর নিয়ে কাজ করি সেই জঁরে যে এই দেশে খুব বেশি কাজ এখনও অবধি হয়েছে তা নয়। এটি কিছুটা গবেষণামূলক ভাবেই শুরু করি আমরা। পুরোটাই নিজেদের চেষ্টায় এবং ইচ্ছেতে। শ্রোতাদের পছন্দ বা অপছন্দের কথা সেসময় মাথায় রাখিনি আমরা। নিজেদের মতো কাজ করতে চেয়েছি। এবার এখন বেশ কিছু শ্রোতা আমাদের গান শুনছেন এবং পছন্দও করছেন। তাঁদের কাছ থেকে ভালো মতামতও পাচ্ছি আমরা।তবে, ভবিষ্যতে ঠিক কি হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এভাবেই সঙ্গীতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলবে। শ্রোতা পছন্দ করলে সেটা উপরি পাওনা তো বটেই!”
‘Change’-এর সমগ্র ভিডিওটি বানানোর দায়িত্বে ছিলেন দেবরূপ মুখার্জী। অত্যন্তঃ যত্নের সঙ্গেই ভিডিওটিতে গানটির কথাগুলিকে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁরা। তাঁর ছোঁয়ায় যেন এক অন্যরকম প্রাণ পেয়েছে ‘Change’। তবে শহরের অন্যতম ভিডিওগ্রাফার দেবজ্যোতি কোলের ছোঁয়া পেয়েছে ‘Change’। এই কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পারিপার্শ্বিক বদলানো সময়কেই আজ এক ফ্রেমে বন্দী করেছে ADTS। বলতে চেয়েছে সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের গল্পই। অসময়ে যুগিয়েছে ভরসা। বুঝিয়েছে সময়ের গুরুত্বও। ঠিক তাদের নামের মতোই, চলতি সময়ে দাঁড়িয়ে বাস্তবের কঠিন কালো মেঘ ভেদ করে এক বিন্দু আলোর মতোই উজ্জ্বল প্রকাশ ‘A dot in the Sky’-এর। আগামীতেও সেই বিন্দুর রশ্মির ছ’টায় ভরে যাক রকসঙ্গীতের আকাশ। এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতোই সে আকাশে বিরাজ করুক ADTS। ‘Change’-কেও সাদরে গ্রহণ করুক সাধারণ মানুষ৷ রইল শুভেচ্ছা অফুরান…
Discussion about this post