মিশ্র সংস্কৃতির দেশ ভারত। খাবার অভ্যাস, পোষাকের বৈচিত্রের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে ঈশ্বর প্রার্থনার ভিন্ন রীতি নীতি। কথায় বলে, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।’ এই বিশ্বাসে ভর করেই রাজস্থানের ওম সিং রাঠোর আজ হয়ে উঠেছেন ওম বাবা। একদিন যেই দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল তার, আজ সেই দুর্ঘটনার হাত থেকে জাতীয় সড়কের গাড়ি চালকদের রক্ষা করেন স্বয়ং ‘ওম বাবা’। অদ্ভুত এই ঘটনাটি রাজস্থানের চোটিলা গ্রামের। চোটিলা গ্রাম পালি থেকে ২০ কিমি ও যোধপুর থেকে ৫৩ কিমি দূরে, জাতীয় সড়কের পাশেই অবস্থিত। কথিত আছে, রাজস্থানের ৬৫ নং জাতীয় সড়কে সবার অলক্ষ্যে আজও বাইকে চেপে ঘুরে বেড়ান বাবা ওম বান্না। বিপদে পড়া ড্রাইভার ও যাত্রীদের সাহায্য করেন তিনি।
স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, এই ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৯৮৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। পালি জেলার বাঙদি থেকে নিজের গ্রাম চোটিলায় ফেরার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ২৩ বছরের যুবক ওম সিং রাঠোর। চোটিলা থেকে মাত্র কয়েকশ ফুট দূরে, রাস্তার পাশে থাকা একটি ছোট্ট গাছে প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা মারে ওমের বুলেটটি। ২০ ফুট গভীর খাদে ছিটকে পড়েন ওম। দুর্ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। তবে অদ্ভুত ব্যাপার, বাইকটির তেমন ক্ষতিই হয়নি। দুর্ঘটনার পর ওমের বাইকটি পুলিশ থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও, ঠিক তার পরদিন সকালেই অদ্ভুত ভাবেই তা ফের পৌছে যায় দুর্ঘটনাস্থলে গাছটির পাশেই।
লোকমুখে ঘুরতে থাকে, এনফিল্ড বাইকটির মধ্যে প্রবেশ করেছে ওম সিং রাঠোরের অশরীরী আত্মা। ফলে ওমের পরিবারও অভিশপ্ত বাইকটিকে ঘরে ঢোকাতে রাজি হননি। বরং সেটিকে বেচে দিয়েছিলেন প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে গুজরাতের এক ব্যাবসায়ীকে। গুজরাত পাড়ি দেওয়ার দু’দিন পরেই আবার বাইকটিকে দেখা যায় গাছটির পাশে। যার খবর পেয়ে গুজরাতি মালিকও আর বাইকটিকে নিতে আসেননি। ফলে গ্রামবাসীরা ঠিক করেন অভিশপ্ত গাছটির পাশেই বানানো হবে এক মন্দির। সেই মন্দিরে পূজিত হবে ওম সিং রাঠোরের অলৌকিক ক্ষমতা যুক্ত বুলেট মোটর সাইকেলটি। যার নম্বর ছিল ‘আরএনজে-৭৭৭৩’।
চারদিক খোলা মন্দিরে কাঁচের ঘেরাটোপে রাখা বাবা ওম বান্নার মোটর সাইকেলটিকে। বাবা ওম বান্নার মন্দিরের পাশে থাকা গাছটিকেও সাজিয়ে রাখা হয়েছে। স্বামীর মঙ্গল কামনায় সেখানে চুড়ি ও চাদর বেঁধে আসেন মহিলারা। তবে সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হল এই মন্দিরে পুজোর অর্ঘ্য হিসেবে বুলেটটির সামনে রাখা হয়, ফুল, নারকেল ও মিষ্টির সঙ্গে মদের বোতল। রোজ শয়ে শয়ে মদের বোতল জমা পড়ে অর্ঘ হিসাবে। বাবা ওম বান্নার ভক্তরা হাইওয়ের বিভিন্ন জায়গায় বাবার অলৌকিক উপস্থিতির কথা বলে থাকেন। কেউ কেউ বলেন, দুর্ঘটনার আঁচ পাওয়া মাত্র বাবা ওম বান্না ড্রাইভারকে বিভিন্নভাবে সতর্ক করতে শুরু করে দেন। প্রত্যেকদিন কয়েক হাজার স্থানীয় গ্রামবাসী, ড্রাইভার ও পর্যটক, পুজো দেন বাবা ওম বান্নার মন্দিরে। ৬৫ জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়া অন্য রাজ্যের বাস, লরি, ট্রাক ও প্রাইভেট গাড়ির ড্রাইভাররাও বুলেট বাবার মন্দিরে থামেন, পুজো দেন।
Discussion about this post