গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় কমে গিয়েছিল বাঘের সংখ্যা। তাই অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে এবং বাঘের সংখ্যা বাড়াতে বন কর্তৃপক্ষের নতুন এক উদ্যোগ বাঘের টিলা। সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে এই টিলা। বন বিভাগের কথা অনুযায়ী, সুন্দরবনে যেসব জায়গায় বাঘের আনাগোনা বেশি, সেসব জায়গায় এসব টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব টিলা শুধুমাত্র বাঘকেই নয়, বরং বাঘ যেসব প্রাণী খেয়ে থাকে, তেমন ছয়টি প্রাণীকেও সুরক্ষা দেবে। যেমন চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, সজারু ও গুইসাপ। মাটি ভরাট করে কৃত্রিমভাবে প্রজনন পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এইরকম ১২টি টিলা তৈরি করছে বন কর্তৃপক্ষ।
ইতিমধ্যে সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রে একটি বাঘের টিলা নির্মাণ করাচ হয়ে গেছে। এছাড়া সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা, পাটকোস্ট, ভোমরখালী, পুস্পাকাটি, মান্দারাড়িয়া ও নোটাবেকী এলাকায় এসব টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। আরও বেশ কিছু অঞ্চল টিলা নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় যুক্ত হচ্ছে। এই টিলা গুলির অন্যতম এক বৈশিষ্ট্য হল যে প্রতিটি টিলার পাশে একটি করে মিষ্টি জলের পুকুর খনন করা হচ্ছে। কারণ মা বাঘদের যাতে তাদের শাবকদের একা রেখে দূরে জল খেতে যেতে না হয়। তাই বলা যায়, এই টিলাগুলো হবে আদতেই বাঘের প্রজননে একটি আদর্শ জায়গা এবং এটি বাঘের বংশ বৃদ্ধিও ঘটবে নির্বিঘ্নে।
২০২২ সালের ২৩ মার্চ সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল আনুমানিক ৩৬ কোটি টাকা। টিলাগুলো এই প্রকল্পের আওতায় তৈরি হচ্ছে। কটকা বন বিভাগের অফিস এবং রেস্ট হাউজের ঘাটের রাস্তাটি দিয়ে বনের দিকে কিছুদূর হাঁটলে দেখা যায় ‘টাইগার টিলা’। এই জায়গাটি আশপাশের অন্যান্য জায়গা থেকে একটু বেশি উঁচু এবং সুন্দরী গাছের ঘন জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত। মনে করা হয় যে কটকার টাইগার টিলার ধরনকে অনুসরণ করেই কৃত্রিম এই টিলাগুলো বানানো হচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, তাই উচ্চ জোয়ারের সময় বন্যপ্রাণীদের ভেসে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। এসব উঁচু টিলার কারণে বন্যপ্রাণীরা উপকৃত হবে।’
Discussion about this post