‘হাওড়া শহরের ফুসফুস’ নামে পরিচিত ডুমুরজলা। এ ছাড়া শহরের বুকে এত সবুজ, এত আকাশ, খোলা বাতাস – আর কোথায়? এখানে প্রকৃতির বুকে যেমন অবাধ খেলাধূলা-শরীরচর্চায় মেতে ওঠে নবীনেরা, তেমনই মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে শ্বাস নিতে আসেন প্রবীণেরাও। ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের পাশেই রয়েছে এক বিশালাকার জলাভূমি। সুদূর আফ্রিকা থেকে চীনগামী পরিযায়ী পাখিরা সেখানে এসে বিশ্রাম নেয়। বন্যার হাত থেকেও শহরকে রক্ষা করে এই ডুমুরজলা। কিন্তু সেই ফুসফুসই যে এবার আক্রান্ত!
সরকারি উদ্যোগে এই ডুমুরজলাতেই তৈরী হতে চলেছে ‘খেল নগরী’। তাতে রাজ্যের ক্রীড়াজগতের ব্যাপক উন্নতি হলেও, অতিমাত্রায় বিঘ্নিত হবে শহরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে জলাভূমিটি ভরাট করার কাজ। বর্তমানে বায়ুদূষণের পরিমাণের নিরিখে দিল্লি ও কলকাতার কাছাকাছি স্থানেই আছে হাওড়া। এমতাবস্থায় সরকারের এই অপরিনামদর্শী ক্রিয়াকলাপের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন হাওড়াবাসী। সব দেখেও যেন দেখছেন না পুলিশ থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন! তাই প্রাণের শহরকে বাঁচাতে আপামর জনসাধারণ মিলেই গড়ে তুলেছেন ‘সেভ ডুমুরজলা জয়েন্ট ফোরাম’। দাবী একটাই – উন্নয়ন হোক, কিন্তু তা কখনই প্রকৃতির বিনিময়ে নয়!
সাধারণ মানুষের খেলাধূলার জন্যই ৫৫ একরের এই জমিটি অধিগ্রহণ করা হয় বাম আমলে। ইতিপূর্বেও ২০১৭-১৮ সাল নাগাদ সরকার এখানে টাউনশিপ বানাতে আগ্রহী হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদে অবশেষে বিফল হয় সেই উদ্যোগ। সম্প্রতি তাতেই একটু রদবদল ঘটিয়ে পেশ করা হয় এই ‘খেল নগরী’ প্রকল্প। যা বাস্তবায়িত হলে হেলিপ্যাড, পার্কিং লট থেকে শুরু করে শপিং কমপ্লেক্স, হাউজিং কমপ্লেক্স – কংক্রিটের জঞ্জালে চিরতরে থমকে যাবে শহরের ফুসফুস এই ডুমুরজলা। এই অঘটন রুখতেই পথে নেমেছে জয়েন্ট ফোরাম। ফোরামের সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে অজয় ব্যানার্জি ও বলরাম ছড়ি। এই মুহূর্তে আইনের পথে লড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফোরামের সদস্যরা।
‘ডেইলি নিউজ রিল’-এর তরফে ফোরামের জনৈক সদস্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “আজ পর্যন্ত অনেক প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদকে জন্ম দিয়েছে ডুমুরজলার মাঠ। কিন্তু এই প্রকল্পের ফলে তা পুরোপুরি সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। লাভ যা হবে তা তো ব্যবসায়ীদের! সাধারণ মানুষের বরং ক্ষতিই হবে। তারা কোথায় খেলাধুলো চালিয়ে যাবে? তাছাড়া পরিবেশের কথাও তো ভাবতে হবে! ক্রীড়াজগতের উন্নতিকল্পে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হোক, তা আমরাও চাই। কিন্তু সেটা কখনই প্রকৃতি ধ্বংস করে সাধারণ মানুষের ডুমুরজলা কেড়ে নিয়ে নয়। ‘খেল নগরী’ বরং অন্য কোথাও হোক।” আগামী রবিবার বিকালে স্টেডিয়ামের সামনেই আয়োজিত হতে চলেছে একটি মানববন্ধন কর্মসূচী। এভাবেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তাঁরা। আশা রাখি, সরকার অবিলম্বেই একটি সমাধানসূচক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে!
Discussion about this post