গত বুধবার সকাল ১০ টা নাগাদ পূর্ণিমার ভরা কোটালে সুন্দরবনের বাসন্তীর ফুল মালঞ্চ এলাকার গৌরদাস পাড়ায় ভাঙল নদীবাঁধ। ফলে জলমগ্ন হয়ে পড়ে আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা। এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। গ্রামবাসীদের তৎপরতায় ক’দিন আগে থেকেই চলছিল নদীবাঁধ সারাইয়ের কাজ। কিন্তু লক ডাউনের ফলে বেশ কয়েকদিন ধরে বন্ধ ছিল সেই কাজ। ফলতঃ কোটালের জোয়ারের ধাক্কা না সামলাতে পেরে ভেঙে পড়ে বাঁধটি।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের কথা অনুযায়ী, এর আগেও এই বাঁধ ভেঙে পড়েছিল। প্রায় প্রতি বছর এই জায়গাটি ভেঙে মাতলা নদীর জল গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বেই স্থানীয় পঞ্চায়েত, বিডিও, সেচ দফতরকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। কাজেই প্রতিবছর একই ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন গ্রামবাসীরা। গত বুধবারের এই ঘটনায় আশপাশের কয়েকটি গ্রাম সহ জলে ভেসেছে চাষের জমি, পুকুর সহ কিছু বাড়িও। যদিও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ভাঙা নদীবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। যদিও এই বাঁধ অদূর ভবিষ্যতে কতোটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে সে বিষয়ে যথেষ্ট আতঙ্কিত গ্রামবাসী।
একদিকে করোনার আতঙ্ক এবং লক ডাউনের বিধিনিষেধ, অন্যদিকে এই অকাল জলপ্লাবন। কার্যত দিশেহারা গ্রামবাসীরা। তাদের কাছে এই ঘটনা যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া! এই এলাকায় যা আকছারই ঘটে চলেছে। এই প্রসঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ডার ভূমির উল্লেখ করাই যায়, যেখানে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে প্লাবিত ভূমিকে উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে একদিকে উন্নত প্রযুক্তির বুলেট ট্রেন ছুটছে। অথচ সুন্দরবনের এই প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষগুলো ছিঁটেফোঁটা সুযোগ সুবিধাও পান না। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এই সমস্যা দিন দিন বাড়তেই থাকছে, নদীতে বাড়ছে জোয়ারের স্রোত। ফলে আগামী দিনে আরও ভয়ঙ্কর সমস্যার সম্মুখীন হতে চলেছেন তারা। তাদের এই সমস্যা কি আদৌ কোনও দিন মিটবে? নাকি প্রশাসন এই মানুষগুলির প্রতি উদাসীনই হয়ে থাকবে! এই প্রশ্নের উত্তরের আশায় আজও দিন গুনে চলেছে সুন্দরবনের মানুষজন।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – বাদল মেঘ মণ্ডল
Discussion about this post