কার্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় আলোয় সেজে উঠবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রাঙ্গন। শ্যামার আগমনে উৎসবের আমেজ সর্বত্র। তিনি স্বয়ং দশ মহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা। উগ্র রূপ,করাল বদনা,দিগম্বরী,হাতে খড়্গ ও নরমুন্ড। দেবীর ভীষণ দর্শনে এককালে কালী পুজো থেকে দূরেই থাকতেন আমজনতা। তান্ত্রিকের গুহ্যবিদ্যা অবধিই সীমাবদ্ধ ছিল মা কালীর উপাসনা। সবই সময়ের অপেক্ষা। শাক্তের আরাধ্যা দেবী কালিকার করুণাময়ী অভয়দাত্রী রূপটিও সাধারণের আড়ালে থাকেনি বেশিদিন। দেবী কালীই তাদের কাছে হয়ে ওঠেন মা আবার কোথাও তিনি যেন ঘরেরই মেয়ে।
ঠিক যেমন বালুরঘাটবাসীও প্রতি বছর সামিল হয় বুড়িমা কালীর বন্দনায়। সারা বছরই নিত্য পুজো চলতে থাকলেও দীপান্বিতা অমাবস্যায় যেন প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দিরে। আলোক সজ্জায় আর ভক্তদের বিপুল সমাগমে নতুন করে সেজে ওঠে তহবাজার এলাকা। তবে এখানে মায়ের কোনো প্রতিমাকে পুজো করা হয়না। কথিত আছে কোনো এক তন্ত্র সাধক আত্রেয়ী নদীর জলে প্রথম দেখা পান এক বিগ্রহের। তিনি সেটিকে স্থাপন করেন আত্রেয়ী নদীর ধারেই। তবে সেই ইতিহাস কবেকার ঠিক মনে করতে পারেন না কেউই। পরবর্তীতে টিনের ঘেরা দিয়ে তৈরি করা হয় মন্দির। আর আজ সেই মন্দিরই ভক্তদের উদ্যোগে পাকা মন্দিরে পরিণত হয়েছে। এখনো সেই শিলা খন্ডকেই মাতৃরূপে পুজো করা হয় মন্দিরে। মন্দিরের সমস্ত দায়িত্ব সামলাতে গড়ে তোলা হয় কমিটি। অনেকের ধারণা একান্ন সতী পীঠের মধ্যে এটি একটি গুপ্ত পীঠ।
তবে পুজোর দিন সেই শিলা খন্ডকে পড়ানো হয় সোনার মুখাবয়ব। সঙ্গে বিগ্রহ সাজানো হয় সোনা-রূপোর বিভিন্ন অলঙ্কারে। মনে করা হয়, দেবী ডাকড়া চন্ডী,বয়রা কালী এবং বুড়িমা তিন বোন। এবং ডাকড়া চন্ডী আত্রেয়ীতে বিসর্জন পূর্বে দেখা করে যান তাঁর দুই বোনের সঙ্গে।
বুড়িমাকে ঘিরে এলাকাবাসীর আবেগ,ভালোবাসা বোঝা যায় ব্যবসায়ীদের দোকানে লক্ষ্য করলেও। ওষুধ থেকে গহনার দোকান খুব সহজেই চোখে পড়বে বুড়িমার নাম। শুধু শহরেই সীমাবদ্ধ নেই বুড়িমাকে ঘিরে থাকা মানুষের উত্তেজনা। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বাদেও বাংলাদেশ থেকেও হাজির হয় ভক্তের দল। সারারাত ধরে চলে পুজো। পুজোর প্রসাদ দেওয়া হয় সাধারণের মাঝেও। ভিড় সামলানোর জন্য মোতায়েন করা হয় পুলিশ বাহিনী।
দেবী কালিকার ভয়াল রূপের অন্তরালে যে ব্রহ্মময়ী মাতৃরূপ, তাতেই আস্থা রেখে বুড়িমা ঈশ্বর-মনুষ্যের বেড়াজাল কাটিয়ে যেন হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর আপন মা। রামপ্রসাদ যে মাতৃসাধনায় বলে ছিলেন, “ডুব দে মন কালী বলে।”
Discussion about this post