‘ক্যাফে’ শব্দটার সঙ্গে এখন আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত। হালকা খাবার নিয়ে বসে বন্ধুদের সঙ্গে জমাটি আড্ডায় মেতে ওঠার ক্ষেত্রে এই আদর্শ জায়গা হয় উঠেছে এই ক্যাফে। তবে কোনো কোনো ক্যাফেতে হালকার সঙ্গে মেলে ভারী খাবারও। ক্যাফের এইসব বৈশিষ্ট্য তো সবারই জানা। তবে এমনও এক ক্যাফে আছে যার কথা শুনলে অবাক হতে হয়। সেখানে আপনি গিয়ে মেনু দেখে অর্ডার দেবেন। আর খাবার শেষের পর নিজের ইচ্ছা মতো টাকা দিয়ে চলে আসবেন। তাতে কেউ আপনাকে কিছুই বলবে না।
হ্যাঁ এরকমই এক অবাক করা ক্যাফে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভারে। ক্যাফেটার নাম হল সেম ক্যাফে। এই অদ্ভুত নামের পিছনে আছে একটা গল্প। এই ক্যাফের প্রতিষ্ঠাতা ব্র্যাড ও লিবী বির্কি ২০০৬ সালের ২০ অক্টোবর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই ক্যাফে তৈরীর জন্য তারা বিনিয়োগও করেন প্রায় ৩০,০০০ ডলার। তবে এ ক্যাফে আর পাঁচটা সাধারণ ক্যাফের মতো ব্যবসায়িক লাভের উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়নি। এই ক্যাফের আসল উদ্দেশ্য খানিকটা প্রকাশ পায় তার পুরো নামটা থেকেই। এর পুরো নাম হলো ‘সো অল মে ইট’। যেটাকে সবাই ছোট করে বলে সেম ক্যাফে। এই ক্যাফের মূলমন্ত্রই হলো স্বাস্থ্যকর খাবারকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সমাজের সর্বস্তরের মানুষই একই মানের খাবার এবং সন্মান উভয়েই পাওয়ার অধিকারী বলে মনে করেন তারা।
এই ক্যাফের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল এখানে খাবারের কোনো নির্ধারিত মূল্য নেই। যে খাবার খেয়ে যা দেন তাই গ্রহণ করা হয়। সেই মূল্য তারা একটি দান বাক্সে রেখে যান। আর যারা কোনরকম মূল্য প্রদানের অক্ষম তারা ১/২ ঘণ্টা সেই ক্যাফেতে সেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজে সাহায্য করেন। তবে কেউ খাবার খেয়ে মূল্য দিক বা না দিক সকলেই সেখানে পান সমান সন্মান ও আতিথেয়তা। এই কর্মকাণ্ড চালাতে ব্র্যাড ও লিবীকে খরচ করতে হয় প্রতিমাসে প্রায় ৫০০০ মার্কিন ডলার। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত এভাবে দিনে তারা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জনের খাবার পরিবেশন করতেন। প্রথম দিকে তাদের প্রতি খাবারে গড় অনুদানের পরিমাণ ছিল ৩.৬৬ ডলার। আর খাবারের গড় খরচ ছিল ৩ ডলার। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুদানের পরিমাণ থাকে কমতে। অনুদান কমলেও গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে যায় অনেকটাই। এখন তারা দিনে প্রায় ৭৫ থেকে ১০০ জন মানুষকে খাবার পরিবেশন করেন। তবে ক্যাফের খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো জো নেই। তাদের পরিবেশিত খাবারগুলো যেমন সুস্বাদু তেমনই হয় টাটকাও। কারণ তারা স্থানীয় কৃষকদের থেকে সরাসরি সমস্ত জিনিস কেনেন।
তাদের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে এনবিসি নাইটলি নিউজ ২০০৯ সালের ৯ মার্চ সকলের সামনে তুলে ধরে। শুধু তাই নয় সেম ক্যাফেকে ‘মেক আ ডিফারেন্স’ শিরোপাও দেওয়া হয়। কোনো শুভ উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কেবলমাত্র ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন হয়। আর সেই কথাটাই আমাদেরকে প্রমাণ করে দিয়েছে ব্র্যাড ও লিবীর উদ্যোগটি।
Discussion about this post