আমরা ছোট থেকে জেনে আসছি, আমাদের সব থেকে বড়ো হাতিয়ার কলম। সেই বিপ্লবের সাক্ষীও হয়েছি অনেক। কাজী নজরুলের ধারালো কলম দিয়ে বেরিয়ে এসেছে কত শত বিপ্লবের কবিতা ও গান। এই কবিতা আর গান যেকোনো ঘুমন্ত জাতিকে এক নিমেষে জাগিয়ে তুলতে পারে। কলম হাতে ধরে তো বিপ্লব অনেক দেখেছি কিন্তু কেউ কি ভাবতে পারেন চামচ দিয়েও নাকি প্রতিবাদের সুর তোলা যেতে পারে? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন! কোনও রূপোর কাঠি, সোনার কাঠি কিংবা জাদুর কাঠিও না একেবারে সোজা ঘরোয়া ব্যবহারের চামচ শেষে বিপ্লব নিয়ে আসছে! তবে অবশ্য এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানা দরকার।
যে চামচ শুধুই খাওয়ার মুখে তুলতে সাহায্য করে সে কী করে বিপ্লবের প্রতীক হতে পারে? সম্প্রতি একটি ঘটনা থেকে জানা গেছে যে ৬ জন প্যালাস্তিনি রাজবন্দী ইসরায়েলের অন্যতম সুরক্ষিত ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ ভেঙে পালিয়ে গিয়েছ তাও আবার সামান্য চামচের সাহায্যে সুড়ঙ্গ কেটে। আর তারপরেই এই চামচ হয়ে ওঠে প্যালাস্তিনিদের প্রতিবাদের অন্যতম হাতিয়ার। ব্যাস, আর কী! এই ঘটনার পর থেকেই রীতিমত গণ হারে প্যালাস্তিনীয়দের ধরে নিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েলি সেনারা। চলছে অকথ্য অত্যাচার, যার হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বাচ্চা বুড়ো নির্বিশেষে কেউই। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বিভিন্ন জায়গা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্যালাস্তিনিদের। এরই মধ্যে এই ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের প্যালেস্তানীরা আওয়াজ তুলেছে বিপ্লবের, হাতে ধরেছে প্ল্যাকার্ড। ঝান্ডা আর এই প্রতিবাদের প্রতীক হিসাবে হাতে তুলেছে চামচ।
সারা পৃথিবীতেই এই নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে নানা ভাবে। তবে তরুণেরা এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছে সবথেকে বেশি। কবির ভাষায় বলতে গেলে যা, “ওরে ও তরুণ ঈশান বাজা তোর প্রলয় বিষাণ, ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি। বন্দুকের মুখে ফুল গুঁজে যে বিপ্লব আসে না তার সাক্ষী থেকেছি আমরা বারবার। তাই হোক না সামান্য একটি চামচই প্রতিবাদের হাতিয়ার। তবু তো তুলেছে বিপ্লবের ঝড়। বিখ্যাত প্যালাস্তিনীয় কার্টুনিস্ট মোহাম্মদ সাবেনেহ আঁকা “টানেল অফ ফ্রিডম” নামক কার্টুনেও ফুটে উঠেছে প্যালাস্তিনিদের ওপর অত্যাচারের সেই দৃশ্য। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় বিখ্যাত সেই ইংরেজি সিনেমা ‘শশাঙ্ক রিডেম্পশন’-এর কথা। মুক্তি খুঁজে নিতে মানুষ কত কিছুকেই অস্ত্র বানিয়ে ফেলতে পারে। আবার সেই অস্ত্রই হয়ে যেতে পারে কত মানুষের প্রতিবাদের প্রতীক। তবেই তো মুক্তির সার্থকতা।
Discussion about this post