ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের সরকারি টিকাকরণের আওতায় এনে অবিলম্বে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি খোলার জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে আগেই। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের গ্রেপ্তার করার বিরুদ্ধে দিকে দিকে জ্বলে উঠেছে প্রতিবাদের আগুনও। সেই আগুনেই যেন ঘৃতাহুতি দিয়ে দীর্ঘদিনের প্রাপ্য অধিকার বুঝে নিতে এবার পথে নামার সিদ্ধান্ত নিলেন দৃষ্টিহীন শিক্ষকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সহ ১২ দফা দাবী নিয়ে ৫ অক্টোবর, কলকাতার বুকে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচী গ্রহণ করছে ফোরাম ফর স্টুডেন্টস্ উইথ ডিজাবিলিটিস (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়), ব্লাইন্ড পারসন্স্ অ্যাসোসিয়েশন ও অল বেঙ্গল ব্লাইন্ড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন।
কিন্তু ঠিক কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত? জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি ইনক্লুসিভ এডুকেশনের নামে যে কোনো সাধারণ স্কুলে প্রথম শ্রেণী থেকেই দৃষ্টিহীন শিশুদের পড়াবার যে নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। এর ফলে ভীষণই অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। তাদের শিক্ষার্জনের মূল ভিত্তি ব্রেইল পদ্ধতিটাই তারা শিখতে পারছে না। একই পরিস্থিতির শিকার শ্রবণজনিত ও বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধী শিশুরাও। এই অসুবিধা আরো বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বর্তমানের মহামারীকালীন শিক্ষাব্যবস্থা। বিভিন্ন ব্লাইন্ড স্কুলের মাধ্যমে কিছু দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী তাও সঠিক শিক্ষালাভের সুযোগ পাচ্ছিল, কিন্তু তাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে অনলাইন ক্লাস। তাছাড়া, পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রুতিলেখক পাওয়া যেমন কঠিন, তাঁদের অনুমোদন প্রক্রিয়াটিও অনাবশ্যক জটিল।
শুধু কি তাই? নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম ব্লাইন্ড বয়েজ একাডেমির মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ১৮ টি স্বীকৃত শিক্ষক পদের মধ্যে ১৫ টিই শূন্য! বেহালায় অবস্থিত শতাব্দীপ্রাচীন ক্যালকাটা ব্লাইন্ড স্কুলের ২৫টি স্বীকৃত পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৬ জন। এমনও কয়েকটি ব্লাইন্ড স্কুল আছে, যেখানে একজনও দৃষ্টিহীন শিক্ষক নেই। সরবরাহ নেই পর্যাপ্ত ব্রেইল বইয়েরও। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার বিষয়টি স্কুল-শিক্ষা দপ্তরের অধীনস্থই নয়! এটি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ জন-শিক্ষা দপ্তরের অধীন। তাই বেশ কয়েকটি স্কুল উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হলেও, শিক্ষকদের বেতন মেলে সেই উচ্চপ্রাথমিক স্তর অনুযায়ীই, তাও অনিয়মিতভাবে। লকডাউনের অছিলায় বন্ধ হয়েছে কনভেয়েন্স অ্যালাওয়েন্স। সাথে রয়েইছে বছর বছর ইলেকশন ডিউটির নামে দৃষ্টিহীন শিক্ষকদের হেনস্থা!
আয়োজক সংস্থাগুলির তরফে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরিফুজ জামান ‘ডেইলি নিউজ রিল’কে জানিয়েছেন, “রাজ্যে সব কিছু স্বাভাবিক চলছে, শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা উঠলেই করোনার ভয়! সাবধানতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে কীভাবে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা যায়, সে ব্যাপারে সরকারের কোনো পরিকল্পনাই নেই। এদিকে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা নিতে না পেরে নষ্ট হতে বসেছে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জীবন। দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে দৃষ্টিহীন শিক্ষকদেরও। প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে সরকার কীভাবে এত উদাসীন হতে পারেন?” আহ্বায়ক সংস্থাগুলির প্রতিনিধিবৃন্দ আজ বিকাশ ভবনে যাবেন মাননীয় স্কুল শিক্ষা মন্ত্রী ও জন-শিক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। পাশাপাশিই করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ডে চলবে প্রতিবাদ সভা। এ হেন পরিস্থিতিতে জয়লাভ করতে তাঁদের আশু প্রয়োজন সর্বস্তরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের সার্বিক সমর্থন!
Discussion about this post