ভাত খোর বাঙালি, ভেতো বাঙালি। ভাত ছাড়া বাঙালি যেন জল ছাড়া মাছ। বিদেশ বিভুঁই যেখানেই যাক না কেন বাঙালির ভাত চাই। সঙ্গে যদি হয় একটু ডাল, ঝুড়িঝুড়ি আলু ভাজা আর এক টুকরো মাছ; ব্যাস, আর কী চাই ! তাই কন্টিনেন্টাল, চাইনিজ খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি একদিন বিশুদ্ধ বাঙালি খাবারও খাওয়া যায়। সঙ্গে একটু পুরনো ঐতিহ্যকে অনুভব করতে পারলে মন্দ হয়না। কলকাতা থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরত্বে শ্রীরামপুরে পেয়ে যাবেন এই অনুভুতি। সুন্দর এক বাঙালি খাবারের ভোজনশালা, নাম তার ‘ভেতো’। শ্রীরামপুর কোর্টের ঐতিহ্যশালী গভর্নমেন্ট হাউসের ঠিক পাশেই রয়েছে ছোট্ট এই রেস্তোরাঁ। লাল রঙের ইটের একতলা ইউরোপীয় শৈলীর বাংলো বাড়ি। সামনে রয়েছে টালির ছাউনি দেওয়া উন্মুক্ত বারান্দা। কোর্ট চত্বরের ঐতিহাসিক ভবনগুলির মধ্যে এটিও অন্যতম।
শ্রীরামপুর মূলত দিনেমার ঐতিহ্য মন্ডিত একটি শহর। তবে ১৮৪৫ সালে দিনেমার প্রশাসন সাড়ে বারো লক্ষ টাকার বিনিময় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে শ্রীরামপুর বিক্রি করে দেয়। তারপর প্রায় একশো বছর শ্রীরামপুর ইংরেজ প্রশাসনের অধীনে থাকে। সেই ইংরেজ আমলে নির্মিত কয়েকটি বাড়ির মধ্যে এটিও একটি। বাড়িটির সঠিক বয়স কত সেই সম্পর্কে কোন উপযুক্ত তথ্য নেই। ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ডেনমার্কের সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ১৮২৭ সালের থম্পসনের ম্যাপে এবং ১৮৬০ সালের গ্যাস্ট্রেলের ম্যাপে এই বাড়িটির কোনও উল্লেখ নেই। যদিও ১৯৩৬ সালের ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে ম্যাপে এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। সুতরাং অনুমান করা হয় ১৮৬০ থেকে ১৯৩৬ সালের মধ্যে কোনো এক সময় বাড়িটি নির্মিত। বাড়িটির সঠিক বয়স না জানা গেলেও আধিকারিক ভাবে ৮৫ বছর পুরাতন ধরে নেওয়া হয়েছে। বাড়িটিকে প্রাথমিকভাবে কোন কাজে ব্যবহার করা হত তা জানা যায়নি। তবে দীর্ঘদিন ধরে ওই বাড়িতে শ্রীরামপুর মহকুমার জায়গা-জমি সংক্রান্ত নথি সংগ্রহ করে রাখা হত। নতুন একটি ভবনে ওই নথিপত্র স্থানান্তরিত করা হলে বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। বহু বছর পরে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ডেনমার্কে এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই বাড়িটিকে সংস্কার করা হয়েছে।
ছোট্ট পুরনো এই বাড়িটিকে রূপান্তরিত করা হয়েছে সুন্দর একটি বাঙালি রেস্তোরাঁয়। দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য পাওয়া যায় বিভিন্ন বাঙালি নামিদামি আহারের পদ। সন্ধ্যায় এখানে চা, কফি সহ বিভিন্ন মুখরোচক পদ পাবেন। এছাড়া রয়েছে বিশেষ হুক্কা নেওয়ার ব্যবস্থা। বাড়িটিকে খুব সুন্দর ভাবে পুরাতন ছবি ও আসবাব পত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। পুরাতন গঠন শৈলী ও সুন্দর পরিবেশের ঐতিহ্যকে অনুভব করতে করতে সুস্বাদু আহার গ্রহণের অসাধারণ আনন্দ পাবেন এই ভোজনশালায়।
চিত্র ঋণ – সাত্ত্বিক আচার্য্য
Discussion about this post