‘তোমাকে দিলাম বনবিবির মাঠ’ ও ‘ডাহুক ডোবা জল নাম’ সহ বিভিন্ন বই লিখেছেন তিনি। বাংলা ও হিন্দিতে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় লেখেন তিনি। তার পরিচয় তিনি লেখিকা এবং সমাজসেবী সঙ্ঘমিত্রা সেন (বনবিবি)। সঙ্ঘমিত্রা সেনের বাবা বিখ্যাত নাট্যকার ডঃ অরুণ কুমার দে। তাঁর মা শিল্পী রঞ্জিতা দে ও ঠাকুরদা নটী বিনোদিনী খ্যাত ‘পালা সম্রাট’ ব্রজেন দে। বেশ কিছুদিন ধরেই ফেসবুকে তাঁকে উত্যক্ত করা হচ্ছিল। অবশ্য তার কিছু অপরাধও রয়েছে। ফেসবুক প্রোফাইলে নামের মধ্যে তিনি ‘বনবিবি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তার অন্যতম আরেকটি অপরাধ, তিনি সমাজসেবা করেন নীরবে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ও রাস্তায় প্রতিবাদে নামেন প্রচার-বিমুখ এই লেখিকা। ধর্ম মানেন না, রাজনীতিকেও বিশেষ পাত্তা দেন না। নাহ, অপরাধের লিস্টি এখানেই শেষ নয়। সঙ্ঘমিত্রা স্বাধীনচেতা ধৃষ্টতায় পাহাড়-জঙ্গলে খোঁজেন বাঁচার রসদ। কোন পাঁচতারা হোটেল নয়, পাহাড়ি মানুষদের ঘরেই আশ্রয় নেন। পাহাড়ি মানুষদের সেবায় তিনি নিবেদিত-প্রাণ। এই অপরাধের মাশুলই দিতে হচ্ছে তাঁকে।
তাঁর নিজস্ব ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে কুরুচিকর মন্তব্য তো ছিলই, এমনকি মেসেজের মাধ্যমে ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয় তাঁকে। প্রতিবাদ করায় তাঁর বাবার গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়ির ড্রাইভারকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগও করলেন লেখিকা। এমনকি তাঁর নিজেরও গাড়ি ভাঙচুর হয়। ঘটনার প্রতিবাদ করায় প্রতিবেশী এক ছাত্রকেও মারধোর করে পায়ের উপর দিয়ে বাইক চালিয়ে দেয় দুষ্কৃতিরা। এরকমটি জানান তিনি। বেশ কিছুদিন ধরেই ফেসবুকে তার সঙ্গে অভব্য আচারণ করে যাচ্ছেন বেশ কিছু মানুষ। কেন হিন্দু হয়েও ‘বনবিবি’ ছদ্মনাম রেখেছেন সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। তার ধর্ম নিয়েও কৈফিয়ত দিতে হয়। এমনকি তাঁর মুখের ছবি কেটে অন্যের শরীরে লাগিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানোরও অভিযোগও উঠেছে। এরপরই পুরো ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন সংঘমিত্রা সেন। তারপরই তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলটি কিছুক্ষণের জন্য রিপোর্ট মেরে নিষ্ক্রিয় করার অভিযোগ ওঠে। এতদিন একা লড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে লেখিকার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর ফেসবুক জগতের বন্ধুরাও।
‘ডেইলি নিউজ রিল’কে ফোনের মাধ্যমে তিনি জানান, ইদানিং খুবই মানসিক অশান্তিতে ভুগছেন তিনি। বেশ কিছুদিন আগেই তাঁর লেখা চুরি করে লেখিকাকে ব্লক করা হয়। এরপর অনুস্মাস দাস নামের একটি ফেক প্রোফাইল থেকে তাঁর ফ্রেন্ড লিস্টে ঢুকে তিনটি কবিতা চুরি করে শর্ট ফিল্ম বানানো হয়। এই ঘটনা ঘটিয়ে অভিযুক্ত সঙ্ঘমিত্রাকেই ব্লক করে।
এই মুহূর্তে তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তার ক্ষোভ, এভাবে চলতে থাকলে মানসিকভাবে আরও জর্জরিত হয়ে পড়বেন তিনি। প্রচার বিমুখ ওই সমাজসেবী তথা লেখিকা কি তবে তাঁর বিরূদ্ধে ঘটে চলা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাউকেই পাশে পাবেন না? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
Discussion about this post