প্রেম ভালোবাসা এসব নিয়ে লিখতে বসলে দিস্তা দিস্তা কাগজ শেষ হওয়ার জোগাড়। একটা সময় ছিল যখন ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকত অপেক্ষার প্রহর। চিঠি চালাচালি কিংবা ল্যান্ডফোনের পাশে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘড়ির কাঁটায় চোখ রাখা। কিন্তু আজকের প্রেমের সংজ্ঞা বদলেছে, বদলেছে তার হিসেব নিকেশ। ফেসবুক ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মিনিটের বন্ধুত্ব থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রেমের সম্পর্ক। আর সেই ছেলেখেলাই কখনো কখনো ডেকে নিয়ে আসে আত্মহত্যার মতো মারণ রোগকে। তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী আজ রাজারহাট এলাকার মানুষ।
রাজারহাটের কাজিয়াল পাড়ার বাসিন্দা সঞ্জীব ধর। বয়স ওই ১৫ কি ১৬ বছরের আশপাশ। ১০ মে বিকেলে ফাঁকা বাড়িতে গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ছেলেটির। পাওয়া যায় সুইসাইড নোটও। যার পরতে পরতে জ্বলজ্বল করছে ছেলেটির ওপর মানসিক নির্যাতনের প্রমাণ। গ্যারেজের গাড়ি ধোয়া কিংবা সাইবার ক্যাফের কাজে দিব্যি রোজগার করত ছেলেটি। আর পাঁচজন উঠতি বয়সের ছেলের মতোই সেও একসময় জড়িয়ে পড়েছিল প্রেমের জালে। নৈপুকুর এলাকার এক কিশোরীর সঙ্গে প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ছিল মেলামেশা। ধীরে ধীরে শুরু হয় একে অপরের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত। কিন্তু সেই সাধারণ সম্পর্কের পরিণতি যে একটা সময় পর গলার ফাঁস হতে চলেছে তা ধারণা করেন নি কেউই। সঞ্জীবের মেসো সোমেন দাস জানান দুর্ঘটনার ক’দিন আগে থেকেই মেয়েটি সঞ্জীবকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেছিল। এমনকি সঞ্জীবের সাথে সম্পর্কে থাকা অবস্থাতেই কেশব জানার সাথেও ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয় মেয়েটির। কেশবও নানাভাবে উত্যক্ত করত ছেলেটিকে। আর সেই থেকেই শুরু সম্পর্কের টানাপোড়েন। এমনকি পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়েই এই সম্পর্ক টিকবে, এমন হুমকিও নাকি দেয় অভিযুক্ত কিশোরী ও তার মা। একদিকে নিজের প্রেমিকার অন্যজনের সঙ্গে সম্পর্ক আবার ভালোবাসা বাঁচাতে এত বড় অঙ্কের টাকার বোঝা। প্রবল এই মানসিক চাপ সঞ্জীবকে ক্রমশ ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে।
অসহায় পরিবারের পাশে থেকেছেন বিবেকানন্দ সেনগুপ্ত এবং পার্থসারথী সেনগুপ্ত নামের দুই পুরুষ অধিকার আন্দোলন কর্মী। পোস্টমর্টেম থেকে এফআইআর সবটাই করা হয়েছে। পরিবারের দাবি এই সুইসাইডের জন্য সম্পূর্ণ দায়ী মেয়ে, মেয়ের মা ও কেশব জানা। তবে মৃতের পরিবারের তরফে পুলিশি অসহযোগিতার দাবি উঠেছে প্রবল। দীর্ঘ দু’মাস দশ দিন লড়াইয়ের পর অবশেষে মেয়েটি এবং তাঁর মাকে আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়। ১৪ দিনের জেল হেফাজতে অভিযুক্ত কিশোরীর মা’কে রাখা হয়েছে দমদম সেন্ট্রাল জেলে। অভিযুক্ত কিশোরীর ঠাঁই হয়েছে লিলুয়া হোমে। এলাকাবাসী থেকে বন্ধু-বান্ধব প্রত্যেকেই ছেলেটির সাথে ঘটা অন্যায়ের শাস্তির দাবিতে হয়েছেন একজোট। প্রতিবাদের আগুন এখন তুঙ্গে। সুইসাইড নোটে লেখা মৃত ছেলের শেষ ইচ্ছে পূরণের আর কোনো খামতি রাখতে রাজি নন তার মা-বাবা।
Discussion about this post