শখে পোষ্য পুষে থাকেন অনেকেই। উচ্চ প্রজাতির লোমশ কিংবা ছোট্ট নাদুসনুদস আকৃতির পোষ্য। নিজের সন্তানের মতো স্নেহ যত্নে আগলেও রাখেন তাকে। কিন্তু পোষ্য মানে কি শুধুই চার দেওয়ালের মধ্যে আপনার কথা শুনে চলা পশুটি? যার রাগ অভিমান খুশি ভালোবাসা সবটাই আপনার চোখের সামনে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত। পাড়ার ঘাস বিছানো কিংবা কংক্রিট পাতা রাস্তায় যে বা যারা দিনরাত কুন্ডলী পাকিয়ে আস্তানা করে। সে কি তবে পোষ্য তালিকা থেকে বাদ? কখনও দেখেছেন তাদের চোখ জুড়ে কতটা আবেগ লুকিয়ে? কারণে অকারণে সতর্কতা জারি করে চলে হয়ত আপনাদেরই সুরক্ষায়। হ্যাঁ নিম্ন প্রজাতির ইতস্ততঃ ঘোরা ওই চারপেয়েগুলোই অজান্তে কখন যেন পাড়ার পোষ্য হয়ে ওঠে। আর সেই আবেগ থেকেই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হলাম আমরা।
সালটা ২০০৭। ভবানীপুরের নেতাজী বালক সংঘ ক্লাবের চত্বরেই জ্যাকের সাথে ওই পাড়ার প্রথম আলাপ। এখানেই একটু একটু করে তার ছোট থেকে বেড়ে ওঠা। হৃষ্টপুষ্ট রাসভারী এক চেহারা। একবার বাজখাঁই গলায় ডেকে উঠলে সাতপাড়া জেগে ওঠার জোগাড়। কিন্তু তার বাইরের এই গোমড়া মুখটার আড়ালে ভীষণ অভিমানী গোছের একটা মন লুকিয়ে থাকত। যেমন ধরুন কেউ হাতে করে না খাইয়ে দিলে তার মুখে খাওয়ার রুচত না। প্রতিদিন তাই পাড়ার মিষ্টি দোকান থেকে তার প্রিয় খাদ্য রসগোল্লা খাওয়াতেই হত। একবার পাড়ার বিয়েবাড়িতে বিশেষ পাত্তা না পাওয়ায় গোঁসা করে বাসের পেছন আঁকড়ে পালাল দ্বিতীয় হুগলি সেতু। পরে অবশ্য চোখে পড়তে বুঝিয়ে ফেরানো হল তাকে। সেদিনের পর থেকে অনুষ্ঠান হলেই জ্যাক চারপায়ে উপস্থিত। আর ভুল করেও যদি সেটি না হয়েছে সারাদিন গুম হয়ে চোখের জলে একাকার। ক্লাবের মিটিং থেকে শবদেহের ম্যাটাডোর পাড়ার সুখদুঃখে কেমন করে যেন আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে পড়েছিল ওই বাদামী রঙা চারপায়াটি। শীতের দিনে গরম জামা, গরমে স্নানের জল আবার বর্ষায় একটা মাথার ছাদ কোনো না কোনো বাড়িতে ঠিক জুটে যেত জ্যাকের। সবার এতটাই আদরের ছিল জ্যাক।
যাকে আঁকড়ে আমরা ভালো থাকি তারাই যেন হুট করে ফাঁকি দিয়ে যায়। বেশ কিছুদিন ধরেই চোখের সামনে জ্যাক একটু করে নেতিয়ে পড়ছিল। পাড়ার প্রত্যেকেই প্রাণপণ চেষ্টাও চালায় তাকে আবার আগের মতো চাঙা করতে তুলতে। কিন্তু ১৩ জুন বিকেলে, যখন আকাশ ভর্তি কালো মেঘ জমেছে জ্যাকও তখন নিঃশব্দে বিদায় নিল। পাড়ার প্রত্যেকের চোখ তখন ঝাপসা হয়ে উঠেছে জলে। নিয়ম মেনে সৎকার হয় ১৪ বছরের প্রিয় জ্যাকের। ভালোবাসার আবেগে পাড়ার সারমেয়ও ঠিক এইভাবে হয়ত একদিন পোষ্যের সম্মান পায়।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – সিতেশ দাস
Discussion about this post