“প্যাঁচা কয় প্যাঁচানি খাসা তোর চ্যাঁচানি।” সুকুমার রায়ের লেখা ‘আবোল তাবোল’ই প্রথম প্যাঁচার সাথে পরিচয় করার আমাদের। আশেপাশে বিকৃত মুখের ব্যক্তিকে দেখলেও আবার “প্যাঁচার মতো মুখ” বলে লোকমহলে চলে উপহাস। এই প্যাঁচা নামক পাখিটি এতই মজাদার আর কৌতুহলে ভরা যে প্রখ্যাত সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর ছদ্মনামে জুড়ে নিলেন ‘হুতুম প্যাঁচা’। কিন্তু ইদানিং তাদের আর তেমন দেখা মেলে না। তবে কি সে প্রজাতি আজ সঙ্কটের মুখে?
জ্বলজ্বলে হলুদ রঙের ড্যাবরা দুটো চোখ। গোলপাতার মতো বড় মাপের মুখ। শরীরের আকৃতির সাথে যা খুব একটা মানানসই নয়। ধূসর বাদামী রঙের ওই ২১ সেমির শরীরটিতে আবার সাদা ছিটের নকশা। ধারালো চোখা ঠোঁট। ড্যাব ড্যাব করে যখন চেয়ে থাকে মনে হয় এই বুঝি প্রেতাত্মারা ধেয়ে আসছে তীরবেগে। আর মাঝরাতে এদের হুদ-হুদ ডাকে শিউরে ওঠে শরীর। গ্রামেগঞ্জে তাই এই হুতুম প্যাঁচাকে নিয়ে রয়েছে কুসংস্কারের ছড়াছড়ি। অপবাদ থাকলেও পাখিটি কিন্তু ভীষণরকম নিরীহ। বসতভিটের কাছাকাছি গোয়ালঘরে, বাঁশ ঝাড়ে কিংবা মোটা গাছের কোটরে এদের বাস। কোটরে আস্তানা হওয়ায় এদের ‘কুটুরে প্যাঁচা’ও বলা হয়। ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়, টিকটিকি, পাখির ছানা, নেংটি ইঁদুর এসবই গিলে খায় এই নিশাচরটি। নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝে একসাথে ৩-৪টি ডিম পেড়ে এরা প্রজাতির বংশগতি রক্ষা করে। ৩৫ দিনের মাথায় ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। দেখতে যতই ভয়ানক হোক না কেন আজ পর্যন্ত মানুষের ক্ষতিতে এর নামটি একেবারেই নেই।
আজ এই ছোট প্রাণীটি একরকম প্রজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন। ক্রমশঃ বিলুপ্তির পথে পা বাড়াচ্ছে প্যাঁচা জাতি। দিনের পর দিন অত্যধিক মাত্রায় গাছের উচ্ছেদে হারিয়েছে এদের আস্তানা। আম্ফান-আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেড়ে নিয়েছে তাদের আশ্রয়। পরিবেশ ভারসাম্যহীনতার চরম স্বীকার হয়েছে আজ এই নিশাচরটি। এভাবে এগোলে হয়ত আর বেশি দেরি নেই যখন এই পাখিটি বিলুপ্ত প্রাণীর তালিকাতেই স্থান পাবে।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – অনুপ মণ্ডল
Discussion about this post