ধর্মের পরিচয়েই সর্বদা হয়ে এসেছে মানুষের পরিচয়। নিজ ধর্মকে বড় প্রতিষ্ঠা করতেও চলে নানা তর্ক বিতর্কের আসর। ধর্ম ভেদে মানুষের শিক্ষা সংস্কৃতির চলে তুল্যমূল্য বিচার। হিন্দু মুসলিমের একসঙ্গে বেঁচে থাকার হদিশ মেলে শুধুই গল্প বইয়ের পাতায়। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে বরং শত্রুতাটাই বাস্তবের মাটিতে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে। এই পরিস্থিতিতেই এক নতুন জগতের সন্ধান দিতে হাজির আজ ফলতার রাহিলা খাতুন। উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী, বয়সও ওই আঠেরোর গোড়ায়। ওইটুকু বয়সেই সে এমন এক কাজ করেছে যা ভাবতেও স্পর্ধা লাগে।
গোটা একটা বছরের লকডাউনে স্কুলগুলোতে তখন এক এক করে ঝাপ পড়ছে, বাচ্চারা ঘরবন্দী। পড়াশুনা তখন লাটে উঠেছে। ঠিক সেইসময়েই নিজের বাড়িতে এক লাইব্রেরী খুলে বসে রাহিলা। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ফলতার এক ছোট্ট গ্রাম আশিনা। আর এখানেরই নয় জন মহিলা মিলে দায়িত্ব নেন এই লাইব্রেরীটির। বলাই বাহুল্য এই কাজে রাহিলার মাও দাঁড়িয়েছেন রাহিলার পাশে। চার থেকে পাঁচটা কাঠের দ্বিতল তাক পরিপাটি করে সেজে উঠেছে নানা বইতে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক থেকে সহায়ক বই। আবার কলেজের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের কিছু কিছু বই। সবরকম সম্ভার রয়েছে এই লাইব্রেরীতে। কাঠের প্রতি তাকে আবার জলের বোতলও রাখা পড়ুয়াদের জন্য। বসার জন্য সাদা চাদর পাতা হয়েছে মেঝেতে। আবার ইচ্ছে হলে চেয়ারে বসে পড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
প্লাস্টার ছাড়া ইটের চারকোণা ঘুপচি ঘর। তার মধ্যেই তৈরী হচ্ছে ভবিষ্যৎ আলোর পথ। সামনেই উচ্চমাধ্যমিকের মাথা বোঝাই পড়াশুনার চাপ রাহিলার। আর তার মাঝেই এমন অসামান্য চিন্তাভাবনা, প্রশংসা না করে থাকা যায় না। গ্রামের ছেলেমেয়েরা নির্দ্বিধায় পড়ার সুযোগটুকু পেয়েছে গোটা লকডাউন জুড়ে। তাই আজ গ্রামবাসীদের অনেকটা ভরসার জায়গা এই লাইব্রেরিটি। শিক্ষার আলোতে এইভাবেই উদ্ভাসিত হোক সমস্ত অন্ধকার। ধর্মের গ্লানি থেকে বেরিয়ে সবার বাহবা কুড়োক এমন অসাধারণ কাজগুলি।
Discussion about this post