‘লালপাহাড়ীর দেশে যা’ এর বাইরেও অরুণ কুমার চক্রবর্তী কতটা জুড়ে রয়েছে?
এর উত্তর তো আমার সঙ্গীসাথীরা ভালো দিতে পারবে। তবে ছোট থেকে আমি একঘেঁয়েমিতে থাকিনি বা থাকতে চাই নি। বন্দুক রাইফেল ক্লাবের মেম্বার হয়েছি। ট্রেকিং করেছি হিমালয়ের পাদদেশে রুকস্যাক নিয়ে। একমাস ব্যাপী লম্বা সফরে সুবর্ণরেখা পরিক্রমা করেছি। নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত হাঁটার এক অভিজ্ঞতা। তারপর পুরুলিয়ার যে পাহাড়গুলো রয়েছে মাঠাবুরু গজবুরু তাতে যে ভীষণ পরিমান গাছ কাটা হচ্ছে তা নিয়েও অনেক লড়াই করেছি। কলকাতার গঙ্গোত্রী ক্লাবের নেতৃত্বে মাউন্টেনিয়ারিং করেছি। শুশুনিয়া পাহাড়ে রক ক্লাইম্বিং। তারপর আদিবাসী গ্রামগুলোকে কাছ থেকে চেনা। তাদের জীবনযাপনের সঙ্গে মিশে যাওয়া। আর গাছকে চিরকাল ভালোবেসেছি। আমার প্রথম বই ‘অরণ্য হত্যার শব্দে’। গাছ বাঁচানোর জন্য বহু আন্দোলনে নেমেছি। ক্যাম্প করেছি। মাস্টার অব এ এডুকেশনের জন্য পদযাত্রা করেছি। পরিবেশ নিয়ে আমার লেখা একটা স্লোগান ১৯৯২ তে দিল্লীর ‘কেয়ার ফর এনভায়রনমেন্ট’র স্লোগান বিভাগে নির্বাচিত হয়। আমি তো জানতামই না কারণ আমি তো পাঠাইনি ওদের কোনো স্লোগান। কে কবে পাঠিয়েছিল তাও জানতাম না। ‘মিনিস্ট্রি অব এনভায়রনমেন্টাল ফরেস্ট’ থেকে জাতীয় পুরস্কার ছিল সেটি। এখনও অনেক সেমিনারে যাই এই পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে। আদর্শ পরিবেশ হল ১৭% জনবসতির গাছ আর ৩৩% বন। এটার দিকে লক্ষ্য রাখতেই হবে, এটুকু বলতে চাই।
চিপকো পরিবেশ আন্দোলনের সাথে আপনি যুক্ত ছিলেন। কেমন ছিল সেদিনগুলো?
এক কথায় দারুণ। চিপকো মানে হল জড়িয়ে ধরো। আন্দোলনটার ইঙ্গিত ছিল এটাই যে আগে আমাকে কাটো তারপর গাছ কাটবে। এমন সহজ উপায়েই পরিবেশের জন্য আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল। এত ভালো লেগে গেল যে আমিও জড়িয়ে পড়লাম এতে। তারপর বিভিন্ন মিটিং যেতে লাগলাম। কীভাবে আটকানো যায় তার নানা পদ্ধতি ভাবা এসব করতে লাগলাম। পুরুলিয়াতে পদযাত্রাও করেছি। আসলে ওরা এতটাই দরিদ্র যে পেটের দায়ে গাছের ডাল কেটে বিক্রি করেন। অযোধ্যা পাহাড়ের দিকে গেলে দেখতে পাবে কতজন মাথায় কাঠের বোঝা নিয়ে হেঁটে চলেছে। তাদের ডেকে বোঝানোটাও একটা ঝক্কি। রান্নার জন্য শুধু ডালপালা কাটতে বোঝানো হয় তাদের। এখন ঘটা করে চারিদিকে বৃক্ষরোপণ তো হচ্ছে কিন্তু তার যত্ন না নিলে লাভ কোথায়? গাছের প্রতি সেই ভালোলাগাটা না জন্মালে কোনোদিন এই সচেতনতা বাড়ানো যাবে না।
সঙ্গীত অলিম্পিকে আপনার লেখা গান সোনা জিতেছিল। কেমন ছিল সে অনুভূতি?
‘ভোলা মন’ ছদ্মনামে বাউল ঝুমুর গাইত একটি ছেলে। সে দেখতো প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা যেমন সহজ মা, ঊষা উত্থুপ আমার লেখাগুলোতে গান গাইছে। তো একদিন সে আমার কাছে এল। দশটার মতো গান চাইল আমার থেকে। সে নাকি নিজের খরচায় রেকর্ডিং করবে। আমি রাজিও হলাম। কিন্তু তার গলাটা ঠিকঠাক লাগছিল না সুরে। তো বাউলতলায় নিয়ে গেলাম তাকে। বাউলদের সাথে সে থাকল গান শিখল। তারপর মোট আটটা গান সে তোলে। এবার কলকাতায় রেকর্ডিং হবে। আমিও গেলাম সাথে। গানের শুরুতে আমার গলায় আবৃত্তি রয়েছে কিছুটা তারপর গান শুরু হয়। যাইহোক গানগুলো এতটাই জনপ্রিয়তা পেল যে দেশ বিদেশ ছড়িয়ে পড়ল। এবার দুবাইয়ের ‘ওয়ার্ল্ড ফোক ফেস্টে’ ওই গানের সিডি পাঠিয়েছিল ছেলেটি। যথারীতি সিলেক্ট হয় এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পায়। “ঠিক ঠিক বাউল জানে পাখির ঠিকানা” গানটা এত দরদ দিয়ে গাইল ছেলেটি কি বলব। তারপর গানটার অর্থ শুনে জুরিরা তো রীতিমতো অবাক। বিদেশের মাটিতে সোনা জিতল বাংলা বাউল গান। স্বপ্নের মতো মূহুর্ত। এরপর সিঙ্গাপুরেও অ্যাওয়ার্ড পায় এই গানটি। আর ‘লালপাহাড়ী’ গানটা তো বহু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। সবথেকে আনন্দের বিষয় হল সাঁওতাল মেয়েরা দেখি আমার গানগুলো গাইছে নাচছে। সময় যত এগোচ্ছে দেখছি গানগুলো বাসি তো হয়নি বরং আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন তো ফিউশনের যুগ। ওই গানগুলোকেই এদিক ওদিক করে গাইছে বহু শিল্পী। ইমন যেমন আসামের একটি গানের সাথে জুড়ে গেয়েছে। তবে ভূমি ব্যান্ডের নামে আমার কেস করা উচিৎ ছিল। শুধু ‘নাগর’ শব্দ ব্যবহার করে আমার লেখা তিনটে কবিতা হুবহু টুকে নিজের তৈরী বলে চালিয়ে নিল। আজও কান পাতলে ২৫ শে বৈশাখ আমার লেখা কবিতা “রবীঠাকুর পেন্নাম হৈ” শোনা যায়। এইভাবেই মানুষ যে এত বছর ধরে গানগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছে এটাই তো আমার পুরস্কার। আর কি চাই!
আপনার সাথে কারোর আলাপচারিতা হলেই আপনই লজেন্স খাওয়ান। এই বিষয়টি কেন?
প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। পার্কস্ট্রিট যাচ্ছিলাম। ২৫ শে বৈশাখের আগের দিন কফিহাউসে একটা আড্ডা ছিল। দাড়িটা তখন সাদা না হলেও একটা ব্যাপার ছিল। লালজামা পরতাম। একদল ছোকরা হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”লুক লুক! মুভিং সান্তাক্লজ।” তখনই লজেন্স কিনে দেই ওদের। তারপর থেকেই আমি এমন লজেন্স দিয়ে থাকি। মানুষ তো খুশি হতে ভুলেই গেছে। তাই একটু চেষ্টা চালাই আনন্দ বিতরণের।
লোকসঙ্গীতের ক্ষেত্রে যে আমরা বারবার ‘বাউল’ শব্দটি শুনি সেটা কি একটা ধারণা?
উভয়েই জীবনমুখী কিন্তু বাউল সঙ্গীত আর লোকসঙ্গীতের ফারাক অনেক। মূলত: দেহতত্ত্ব নিয়েই বাউল এসেছে। লালন ফকির যেমন প্রশ্ন আনলেন তাঁর বাউলসুরে “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।” বিজ্ঞান বলবে সবটাই ক্রোমোজোমের খেলা। জিন থাকলেই জীবন আছে। কিন্তু তার সৃষ্টি কিভাবে? বিজ্ঞান কিন্তু এই জীবনের উৎপত্তির ব্যাখ্যা করলেও প্রক্রিয়া সৃষ্টি কীভাবে জানে না। আবার ‘গীতগোবিন্দ’তে কবি জয়দেব ব্যাখ্যা দেন রাধাকৃষ্ণের মিলনপর্ব। রাধা কৃষ্ণের যে আকর্ষণকে ‘আ সিক্রেট ডিভাইন পর্ণোগ্রাফি’ মনে করি। কারণ সে তো কোনো দৈহিক মিলন নয়। এক দৈবমিলনের ইচ্ছা তাড়া করে দু’জনকে। রাধাকে তাই আমরা কখনও ‘মা’ হতে দেখিনি। চিরকালীন প্রেমিকা তিনি। এই যে দেহ থেকে দেহাতীত স্থানে যাওয়ার বাসনা সেখান থেকেই বাউলের সৃষ্টি। বাউল গানের আবেদন দেহের গভীরের একরকম গবেষণা। আর লোকসঙ্গীত হল লোকসংগ্রাম। সাধারণ ভাষায় প্রকৃতির নদী, মাঠ, ঘাট, ফসল, ফুলের ব্যাখ্যাই রয়েছে লোকসঙ্গীতে। যেমন ভাটিয়ালীতে মাঝির সাথে মানুষের কথোপকথন চলে। আবার ঝুমুরে নারী পুরুষের সংসার, ভালোবাসার ছাপ। ওদিকে টুসুতে ফসল সংক্রান্ত নানা তথ্য, শস্যের সৃষ্টি। এমন ধামাই, ভাদু অনেক ভাগ রয়েছে লোকসঙ্গীতে।
লোকসঙ্গীত গাইতে গেলে কি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখার দরকার রয়েছে?
সঙ্গীতের যে এই সপ্তসুর তার উৎস কিন্তু প্রকৃতি। যেমন কোকিলের কন্ঠ থেকে পঞ্চম রাগ। আবার রিজার্ভ পেয়েছি ষাঁড়ের থেকে। এই স্বরগুলোকে নিয়েই মানুষ তার মেধা দিয়ে সাজিয়েছে এক এক সুর। আবার প্রকৃতির বিভিন্ন সময়ের যে সৌন্দর্য্য তার উপরও কিন্তু রয়েছে সুরের নির্ভরতা। যেমন সকালে ভৈরবী, দরবারী গভীর রাতের রাগ। এইভাবেই শুদ্ধ চিন্তাতে প্রকৃতির সান্নিধ্যেই রাগ-রাগিনীর সাধনা শুরু হয়েছে। আটপ্রহরের বিভিন্ন মূহুর্তে মানুষের যে চিন্তা কিংবা ভাবাবেগ আসে তা থেকেই সৃষ্টি এই রাগগুলির। অসামান্য দক্ষতা দিয়ে সেই প্রকৃতির সুরকে কাজে লাগিয়েই অদ্ভুতভাবে গলার খেলায় মাতেন পন্ডিতরা। স্থান বিশেষে যে কত রাগ কত ঘরানা রয়েছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে, আশ্চর্য হতে হয়। তবে বিষ্ণুপুর ঘরানাটি বাংলার সম্পদ। ইতিহাস পর্ব থেকেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি কিন্তু কবির লড়াই লোকসঙ্গীতও চলে এসেছে। এরা সবাই একে অপরের পরিপূরক। মানসিক পরিস্থিতি থেকেই তো গানের ভাব আসে। যেকোনো সময় কি যেকোনো গানের প্রতি ভালো লাগা আসে? সুতরাং, সবরকম শিক্ষায় প্রয়োজন। কোনো বিশেষ একজাতীয় গানের শিক্ষা নয়।
নির্দিষ্ট কিছু টিভি চ্যানেলের ট্যাগ নেই এমন স্বাধীন শিল্পীরা বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন। আপনি কী বলবেন?
টিভি শো মানেই ব্যাবসা। একটা জমকালো চটকদার ব্যাপার। ভেতরে শুধুই দুর্ণীতিরই গল্প। এমনও শুনেছি টাকা দিয়ে শোতে চান্স পেয়েছে। এসব তাও ঠিক আছে কারণ টাকার খেল তো আজ সব জায়গায়। কিন্তু অসহ্য লাগে যখন শিশুদের মুখে কিছু প্রাপ্তবয়স্কের গান শোনা যায়। একটা ৫-৬ বছরের বাচ্চা গাইছে ‘চুম্মা দে চুম্মা দে’ এটা কি ধরণের সংস্কৃতি? কিন্তু দর্শক সেগুলোই গিলছে। মা বাবারা জানেন বাচ্চাকে রিয়েলিটি শোতে গাওয়ালেই বুঝি গ্ল্যামার আসবে। কিন্তু শিশুর যে মানসিক বিকাশ তার যে বেড়ে ওঠার সারল্য সেটা থাকছে কি? বিনোদনের ব্যবসা করতে গিয়ে বাচ্চাদের দিয়ে যা খুশি গাওয়ানো বা নাচানো কেন? তারপর সারেগামা থেকে যে এত শিল্পী বেরোচ্ছে পরে তাদের কটার নাম পাওয়া যাচ্ছে বলত? সব ওই গ্ল্যামারের পেছনে ছুটতে গিয়ে আসল কাজেই ফাঁকি দিচ্ছে। আর ভুল প্রচারের ব্যপারটা তো আরও মারাত্মক। সারেগামাপা তে সুভাষের মেয়ে অর্পিতা আমার লেখা গানকে ‘বাবার গান’ বলে প্রচার চালাচ্ছিল। পরে অভিযোগ জানানো হল বাইরে থেকে তখন গানটা ব্লক করা হল এবং ভুল সংশোধনও করা হয়েছে। ‘লালপাহাড়ী’ গানটাও আমার লেখা। সুভাষকে দিয়ে গাইয়েছিলাম ঝুমুর সুরে। যাইহোক, ব্যবসা মানেই এসব ভুল অন্যায় থাকবে। কিন্তু টিআরপির আশায় শিশুদের নিয়ে যে ব্যবসাটা চলছে এটা বন্ধ হওয়া দরকার।
এই প্রযুক্তির যুগে কোথাও কি হারিয়ে যাচ্ছে একতারার টঙ্কার? একতারার টঙ্কার কি শুধুই এখন স্টাইল আইকনে রূপান্তরিত হয়েছে?
সরোদ, বাঁশি, একতারা সব বাদ্যযন্ত্রেরই একটা আলাদা মাধুর্য্য আছে । একটা আলাদাই মাদকতা খুঁজে পাওয়া যায় যখন আসল বাদ্যযন্ত্রটি বেজে ওঠে। কিন্তু এখন উন্নত প্রযুক্তিতে ওই সিন্থেসাইজারেই সব বাদ্যযন্ত্রের সুরকে জড়ো করা রয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে ধরা পড়ে যায় আসল নকলের তফাৎটা। গান মানে সুর, লয়, ছন্দের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের যে একটা গুরুত্ব রয়েছে সেটা এরা বোঝে না। আসল বাঁশি যদি বাজানো হয় কোনো গানে সে গান মন ছুঁতে বাধ্য। আজকাল দেখি ড্রাম অক্টোপ্যাড দিয়েও বাউলের গান ধরছে। এসবটাই গ্ল্যামারের টানে হচ্ছে প্রচারের আশায়। একতারা তো এখন একটা শো-পিস। শুধুই হাতে শোভা পায়, বাজছে অন্য সব যন্ত্রাদি। কিন্তু ৪০-৫০ বছর আগে রাধারাণী দেবী ( পুণ্যদাসের দিদি) যখন শুধুমাত্র একতারা নিয়ে গানটা ধরতেন কী যে অপূর্ব শোনাত। অমল পালেরও এমন একতারায় কিছু বাউল গান রয়েছে। কিন্তু এই প্রজন্মের কাছে আসল একতারার রসবোধ তো অজানা। তারা সিন্থেসাইজারে মেলাচ্ছে একতারাকে। যাদের সেই বোধটা তৈরী হয়েছে তারা খুঁজে বেড়ায় আসল বাদ্যের সুর। কিন্তু তার সংখ্যাটা যে একেবারেই কম। আর ১৬ থেকে ১৮ টা বাউল গানই ওরা জানে, তারই প্রচার চালায়। অথচ আড়াই হাজার মতো বাউল গান রয়েছে বাংলায়। রবীন্দ্রনাথের লেখা কত বাউল সঙ্গীত রয়েছে। নীলকন্ঠ, কৃষ্ণপ্রসন্ন সেন, হাঁসন রাজার কত গান রয়েছে। যাই হোক একতারা ছাড়া বাউল গানে কোনো প্রাণ নেই এটুকু বলতে পারি।
রিয়েলিটি শো কি শিল্পী তৈরী করে নাকি তারকা তৈরী করে?
সেলিব্রিটি মানে যারা পরিচিত মুখ। তবে পরিচিতি পেলেই তারকা হয় না। যারা লোকসঙ্গীত করে বাউল গায় তাদের জীবনযাত্রাটা খুবই সাধারণ। মাটির মানুষ তারা। নিজের মতো করেই বাঁচে। কিন্তু তারকা মানে গায়ে গ্ল্যামারের আঁচ লেগে গিয়েছে। তাদের স্টাইল তখন মানুষের কাছে অনুকরণের পর্যায়ে চলে যায়। যাদের মধ্যে শুধুই শিল্পীসত্ত্বা রয়েছে তারা নিজের রুচিতেই থাকে। যেমন সুধীর বাউল ছিল খুবই জনপ্রিয় বাউল কিন্তু গ্রাম ছেড়ে বেরলো না, তাই তারকা হওয়াও হল না। আর তারকা বা স্টার হতে গেলে ফ্যাশান ডিজাইনারদের রুচিতে চলতে হয়। এখন তো দু’চারটে লোকসঙ্গীত টিভিতে গেয়েই স্টেজে উঠে বাউল গান গেয়ে ফেলছে। আবার ইউটিউবেও অনেকেই নিজের মতো সুর বসিয়ে গেয়ে তারকা হয়ে যাচ্ছে। কিছুজন আবার আমার লেখাকে নিজের বলেই চালিয়ে দিচ্ছে। ভুলটা যদিও আমারই। কপিরাইট করে তো রাখিনি যখন লিখেছিলাম। টিভি সিরিয়ালে পরিচিত এক ভদ্রমহিলা আমার একটা বিখ্যাত গানের মধ্যে নিজের দুটো শব্দ লাগিয়ে নিজের গান বলে চালিয়ে দিলেন। ভূমি ব্যান্ড তিনটে আমার কবিতাকে জড়ো করে নিজের গান করে নিল। গান চুরি তো হয়েইছে। সেদিক দিয়ে যারা আমায় অনুকরণ করছেন তাদের কাছে আমি তারকা। আবার কারোর কাছে আমি শুধুই শিল্পী। আর চ্যানেল তো তারকাই বানায় শিল্পী নয়।
সফটওয়্যারের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা কি গানের ক্ষতি করছে?
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যন্ত্র গানকে ফলো করবে গান যন্ত্রকে নয়। অনেক বাজনদার আছেন যারা নিজের কেরামতি দেখাতে গিয়ে গানটার আবেগকেই মাটি করছেন। সেটি চলবে না। নতুন প্রযুক্তি যদি গানকে আরও শ্রুতিমধুর করে তবে অবশ্যই ভালো। একটা উদাহরণ দেই। মহীনের ঘোড়াগুলির যে গৌতম চট্টোপাধ্যায় ওরফে মণি ও এসেছিল আমাদের তমালতলার আশ্রমে। ও দেখি গিটারটা নিয়ে বাউল গানটার সাথে টুংটাং করছে। কিন্তু শুনতে বেশ লাগছে। ডিস্টার্ব করছে না ওর ওই মিউজিকটা। ওকে তা জানিয়েওছিলাম। অর্থাৎ মিউজিসিয়ানের কাজই হল গলার সাথে গানের সাথে হাঁটা। তাকে ছাপিয়ে বেরিয়ে যাওয়া নয়। তাই যন্ত্র সে আধুনিক কি পুরোনো মিউজিকের সংমিশ্রনটা ঠিক না হলেই মুশকিল।
সাক্ষাৎকারটি সম্পাদনা করেছেন অনন্যা করণ, কভার চিত্র – শান্তনু মালিক, ভিডিওগ্রাফি কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী
Discussion about this post