“ভুবনে কৈলাশ-শোভা ভূ-কৈলাশ ধাম, সত্যের আলয় শুভ সত্য সব নাম।” দীনবন্ধু মিত্র তাঁর সুরধুনী কাব্যে এই ছন্দেই ব্যাখ্যা করেছিলেন ভূ-কৈলাশ রাজবাড়িটির। শোনা যায় সাধক রামপ্রসাদও নাকি বেড়াতে এসে রাজবাড়ির শিবমন্দিরটির রূপে একেবারে মুগ্ধ হয়ে পড়েন। যেন শিব স্বয়ং কৈলাশ থেকে এসে এই মন্দিরটিতে অধিষ্ঠান করেছেন। সেই কারণেই মন্দিরের নাম দেন তিনি ভূকৈলাশ। কিন্তু এখন এই মন্দিরটির একদম ভগ্ন শরীর। নেই সেই রাজকীয় উজ্জ্বলতা। একরকম ধূলো ধূসরিত ধ্বংসস্তূপ বলা যায়। তবুও এই মন্দিরের গায়ে আজও লেগে রয়েছে ঐতিহ্যের রঙটা। রয়েছে ইতিহাসের নানা কাহিনীর ঘনঘটা।
১৭৬১ থেকে ১৭৬৪ সাল। ঘোষাল বংশের আদি পুরুষ হলেন কন্দর্প ঘোষাল। তাঁর পুত্র গোকুল চাঁদ ঘোষাল সেসময় নুনের ব্যবসায় বেশ প্রসার পান। ইংরেজদেরও নজরে পড়েন এবং চট্টগ্রামের দেওয়ান হিসেবে মোতায়েন হলেন। বাড়তে থাকল বিষয় বৈভব। খিদিরপুরের কাছে অনেকখানি জমি নিজের নামে কিনে ফেললেন। কিন্তু থাকতেন ফোর্ট উইলিয়াম অঞ্চলেই। পরে তাঁরই ভাইয়ের ছেলে জয়নারায়ণ ঘোষাল ভীষনরকম নাম খ্যাতি যশ অর্জন করেন। খিদিরপুরে এসে তাই প্রায় ২০০ বিঘা জমি জুড়ে তৈরী করেন এক প্রকান্ড রাজবাড়ি। তখনই নির্মান হয় বাড়ি সংলগ্ন দুটি শিবমন্দিরের। যেখানে আজও ১১ ফুটের কালো কষ্টিপাথরের তৈরী শিবলিঙ্গের পূজা হয়। পরে অবশ্য ১৭৮২ তে আরও একটি মন্দির স্থাপন করেন তিনি। অষ্টধাতু দিয়ে নির্মিত ঘোটকাকৃতি সিংহারূঢ়া মহিষাসুরমর্দিনী দশভূজা মূর্তি কুলদেবীর মন্দির। এখনও পর্যন্ত সেই মন্দিরে দুর্গাপুজো হয় জাঁকজমকে। ভিড় করেন বহু দর্শনার্থী আজও।
খিদিরপুর ডক থেকে ট্রাম লাগোয়া ১০-১৫ মিনিটের হাঁটাপথ। এখনও রাজ পরিবারের মানুষ ও বেশ কিছু স্মরণার্থী এখানে বাস করছেন। আধুনিকতার ছোঁয়াতেই সেটিকে নতুন করে বাসযোগ্য করে তোলা হয়েছে। ৩০০ বছরের পুরোনো এই রাজবাড়িটি ঐতিহ্যের আখড়া। ১৯৯৬ এর ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন তাই এটিকে “হেরিটেজ অব কলকাতা” শিরোপাটিও দিয়েছেন।
Discussion about this post