কুবেরের ধন’ কথাটির সাথে অল্পবিস্তর আমরা সবাই পরিচিত। কোনো ধনী ব্যাক্তির বিশাল সম্পত্তিকে বোঝাতেই, এই প্রচলিত কথাটির ব্যবহার। কুবের আসলে হিন্দু ধর্মমতে, ধনের দেবতা। কিন্তু বাস্তবে কুবের বলতে আমাদের চোখের সামনে বিল গেটসের নামটিই জ্বলজ্বল করে। আর ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা তরুণ প্রজন্মের মার্ক জুকারবার্গও এর আওতায় পড়েন। কিন্তু গণনায় জানা গিয়েছে বিল গেটস কখোনই সর্বকালের ধনী ব্যক্তি নন। মোট সম্পদের পরিমাণের বিচারে, বর্তমানের সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তিও বিশেষ একজনের কাছে তুচ্ছ হয়ে পড়বেন। অবাক লাগছে? কিন্তু এটাই সত্য। চলুন দেখি চোদ্দ শতকের ইতিহাস কী বলছে?
১৩০৭ সাল। ৩২ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন মানসা মুসা। ‘মানসা’ অর্থাৎ সুলতান বা সম্রাট। মালির দশম সুলতান মুসা। অধুনা আফ্রিকা মহাদেশের মালি, আইভরি কোস্ট, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল, নাইজার, গাম্বিয়া, বুর্কিনা ফাসো, গিনি, গিনি বিসাউ, ঘানা ছিল মালি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। তবে মানসা মুসা ছিলেন দক্ষ শাসক, ধার্মিক, শিক্ষা বিজ্ঞান অনুরাগী ও উদার মনের মানুষ। তাঁর বিশাল সেনাবাহিনীকে আজকের ‘সুপার পাওয়ার আর্মি’র সঙ্গে তুলনা করা যায়।
১৩২৪-২৫ সাল। মক্কায় যান হজ করতে। ইসলাম ধর্মের অনুরাগী ছিলেন তিনি। কথিত রয়েছে, ৮০ থেকে ১০০ টি ঘোড়া নিয়ে যান হজ করতে। প্রত্যেক ঘোড়ায় পর্দায় ১৪০ কেজি সোনার বহর। ২০১২ এর জরিপ অনুযায়ী, ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের মালিক ছিলেন তিনি। যেখানে বিল গেটসের মোট সম্পদ ৮ কোটি ৪৫০ হাজার মার্কিন ডলার। শোনা যায় হজে গিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড ওজনের সোনা ব্যয় করেন। মালির টিমবাকটু শহরকে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষাকেন্দ্র পরিণত করেন। তাঁর নির্মিত বিশেষ কটি স্থাপত্য হল,’ইউনিভার্সিটি অব শাঙ্কোর’, ‘হল অডিয়েন্স’, ‘গ্র্যান্ড প্যালেস’। কয়েকটি মসজিদও তৈরী করেন তিনি। সেই সময়ের ২৫ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী বিদ্যার্জন করত বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাঠাগারে ১ লক্ষেরও বেশি বই ছিল। বিশ্বের সেরা গণিতজ্ঞ, সঙ্গীতজ্ঞ, বিজ্ঞানী, চিকিৎসকদের তিনি নিজের সাম্রাজ্যে আনতেন।
২৫ বছর রাজত্ব চালিয়ে ১৩৩২ সালে বিদায় নেন তিনি। যদিও মৃত্যুর কারণ উদ্ধার হয়নি। কিন্তু ২০১২ সালে ‘সেলিব্রিটি অব ওয়ার্থ’ এর গবেষকরা জানান, তিনিই ছিলেন সর্বকালের সর্বাপেক্ষা ধনী ব্যক্তি।
Discussion about this post