সেরা প্রেমের গল্প বললেই কার নাম মাথায় আসে ভাবুন তো? নিশ্চয়ই রোমিও-জুলিয়েট নয়তো বা লায়লা-মজনু। আর বাংলায় প্রেম মানেই তো রাধা কৃষ্ণের সেই ঈশ্বরিক আকর্ষণ। কিন্তু আজ বাংলারই এমন এক প্রেম কাহিনী আলোচনা করব যাকে এতদিন অন্যরূপেই চিনে এসেছেন। আজ তাঁর এক সুললিত প্রণয়ের সঙ্গেই আপনাদের সাক্ষাৎ করাচ্ছি।
বৈষ্ণব কবি চন্ডীদাসকে কে না চেনে! বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর নামটি আজও নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে। তাঁর রচনার সুরে আজও মাতোয়ারা বাংলার গ্রাম্যপথগুলো। বীরভূমের নানুর গ্রামই ছিল তাঁর ঠিকানা। তাঁর লেখায় তাই বারংবার খুঁজে পাওয়া যায় নানুরের স্পর্শটা। তবে তাঁর পরিচয়ের সাথেই জুড়ে যায় আরও একটি নাম। রাজকিনী- রামী। কিন্তু কে এই রামী? কেনইবা চন্ডীদাস পরবর্তীতে রামী-চন্ডীদাস নামেই জনপ্রিয় হলেন?
প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী রামী ছিলেন নানুরের বিশালাক্ষী মন্দিরের এক বাল্য বিধবা পরিচারিকা। রাজকিনীর ঘাটে আসতেন কাপড় কাচতে। আর চন্ডীদাস হাতে ছিপ নিয়ে বসতেন তাঁরই অপেক্ষায়। ওই সময় মন্দিরের প্রধান পূজারী ছিলেন স্বয়ং কবি চন্ডীদাস। দেবীর স্বপ্নাদেশেই ওই ধোপানী রামীকে মন্দির চত্বরে আসার অনুমতিও দিলেন কবি। ধীরে ধীরে একে অপরের সান্নিধ্যে আসেন। শুরু হয় প্রণয়। কিন্তু এক বিধবা অচ্ছুৎ জাতের মেয়ের সঙ্গে মন্দিরের পুরোহিতের এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি তখনকার সমাজ। রামীকে ত্যাগ না দিলে কবিকে একঘরে করারও হুমকি আসে সমাজপতিদের থেকে। কিন্তু না, কোনো অবস্থাতেই রামীর হাত ছাড়েননি কবি।
শেষমেশ সমাজ রামীকে তাঁর সাধন সঙ্গিনী হিসেবেই স্বীকার করে নেয়। লক্ষ্য করলেই দেখা যায় তাঁর গানের সুরে ও ভাষায় রামীর কথাও এসেছে বহুবার। আজও কবির নামের সাথেই তাই উচ্চারিত হয় তাঁর প্রেম সাধিকার নাম। নানুরে রয়েছে তাঁদের যুগল মূর্তিও। বীরভূমের মানুষ এখনও তাঁদের প্রেমকে সম্মান জানায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামেও উঠে এসেছে এমনই দৃষ্টান্ত। আজও তিনি বাংলার প্রত্যেকটি মানুষের মনে বিরাজমান। তাঁর মৃত্যু ঘটলেও তাঁর সৃষ্টিরা কখনো চাপা পড়েনি। নানুরের লালমাটির পথে আজও রামী-চন্ডীদাসের প্রেমের গন্ধটা লেগে। সাধনার মধ্যেই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে এক অলিখিত প্রেমকাহিনী।
চিত্র ও তথ্য ঋণ – bongodorshon.in
Discussion about this post