সমাজ যতই আধুনিক হোক না কেন কিছু জায়গায় এখনও যেন সেই মধ্যযুগীয় টানটা রয়েই গিয়েছে। তারমধ্যে একটি হল কন্যাদানের দায়। মেয়েকে সৎপাত্রে না তুলে দেওয়া পর্যন্ত শান্তি নেই তার মা-বাবার। পিতৃতান্ত্রিকতার এই ছাপ তো আজও ঘরে ঘরে। আর যদি বাবার সামর্থ্য হয় নগন্য তবে তো কথাই নেই। মেয়ের বিয়ে দিতে একরকম দেউলিয়া দশা। আর যদি মেয়ে হয় পিতৃহীন? তাদের তবে কি কোনো শখ আহ্লাদ থাকতে নেই? অনুষ্ঠান করে লোক খাইয়ে সামাজিক রীতি নীতি মেনে বিয়ে করার? সেইসব দুঃস্থ মেয়েগুলোর মায়া জড়ানো মুখের দিকে তাকিয়েই এগিয়ে এসেছে ‘শিবাঙ্গী হেল্পিং হ্যান্ড’ সংস্থা। গরিব পরিবারের বিয়ের ক্যাটারিং পরিষেবা বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য শুরু হল শিবাঙ্গী ক্যাটারার।
বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের একটি ছোট্ট গ্রাম লায়েক বাঁধ। ছোট্ট ছোট্ট খুপরি বাড়িতেই বাস বহু মানুষের। কারোর রোজের ভাত জোটেনা তো আবার কেউ মেয়ের বিয়ে দিতে হিমশিম খান। বিয়ের আগেই বাবা হারিয়েছে এমন মেয়ের সংখ্যাও ভালই রয়েছে গ্রামটিতে। তাদের পাশে সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে এসেছেন কৌশিক কুম্ভকার ও দীনেশ পাত্র নামের দুই সহৃদয় ব্যক্তি। অসহায় হতদরিদ্র পরিবার। মেয়ের বিয়ে দিতে হাজার হাজার টাকা খরচ। তার ওপর লোক খাওয়ানোর একগাদা টাকা। তাই বিয়েতে অন্ততঃ ১৫০-২০০ লোকের খাওয়ানোর দায়িত্বটা স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছে এই সংস্থাটি। ২০১৯ থেকেই এই সংস্থার পথচলা শুরু।
সদস্য সংখ্যাও এখন বেশ বেড়েছে। প্রতিমাসে সদস্যদের থেকে ৫০ টাকা করে তুলে জমা হয় সংস্থার অ্যাকাউন্টে। আর তারপরই সময় সুযোগ বিশেষে ছুটে যান তাঁরা শুকনো মুখের মেয়েগুলোর বিয়ের জোগাড়ে। তবে শুধুই বিয়ে নয় গরিব ছেলেমেয়েদের হাতে বই, খাতা, খাবার থেকে দাতব্য চিকিৎসার আয়োজন হয়েই চলে বছর জুড়ে। গোটা লকডাউনে ৮০০-৯০০ পরিবারের হাতে পৌঁছেছে নিত্যদিনের চাল-ডাল। দু’হাজারেরও বেশি মানুষের খিদের জ্বালা মিটিয়েছে এই সংস্থাটি। তাঁরা আশা রাখেন ভবিষ্যতে আরও গরীব বাড়ির বিবাহযোগ্যা কন্যার দায় তুলে নেবেন নিজেদের কাঁধে। বাঁকুড়ার লালমাটি থেকে হাওড়া, নদীয়ার গ্রামগুলিতেও নিজেদের সাহায্যের ঝুলি নিয়ে পৌঁছে যেতে চান তাঁরা। শিবাঙ্গী হেল্পিং হ্যান্ডের এই প্রচেষ্টা যথেষ্টই বাহবা কুড়িয়ে চলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আগামীতেও সর্বহারা মেয়েদের সহায় সম্বলের অন্যতম ঠিকানা হবে এই সংস্থা।
Discussion about this post