আজকের সময়ে হাতের সারাদিনের সঙ্গী এই মুঠোফোন। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় ডেটার আঁতুড়ঘর হল এই মুঠোফোনটি। পিডিএফ থেকে শুরু করে কত কি যে জমা হয়ে চলেছে এখানে তা হয়ত কোনোদিন ভেবেই দেখা হয়নি। আর যতটা নির্ভরতা বেড়েছে এই জিনিসটিতে ততটাই বেড়েছে জোচ্চুরির মাত্রা। আপনার অজান্তেই হয়ত আপনার গোপন তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বসমক্ষে। এমনই এক বিরক্তিকর ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন হুগলী উত্তরপাড়ার শিক্ষিকা মনিকা বিশ্বাস সরকার।
গত ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যের সময় শিক্ষিকা বের হন পিডিএফ প্রিন্ট আউটের উদ্দেশ্যে। পিডিএফটি ওনার এক পরিচিত হোয়াটস্যাপে ওনাকে পাঠান। দোকানের কর্মীটি পিডিএফ ফাইলটি কোথায় রয়েছে জিজ্ঞেস করে? শিক্ষিকা জানান সেটি হোয়াটসঅ্যাপে লোড আছে। কর্মীটি তৎক্ষণাৎ ফোনটি চেয়ে ফেললেন। তাড়াহুড়োতে শিক্ষিকা কিছু না ভেবেই ফোনটি দিয়েও দেন। ওই কর্মচারী শিক্ষিকার অজান্তে অনুমতি ছাড়াই হোয়াটসঅ্যাপের বারকোড স্ক্যান করে গোটা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট খুলে ফেলেন কম্পিউটারে। শিক্ষিকা ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি আমার হোয়াটস্যাপ থেকে এভাবে নিচ্ছ কেন?” তাতে সে জানায় এভাবেই নাকি সুবিধে হয়। শিক্ষিকা অস্বস্তি বোধ করলেও ওইভাবেই পরিচিতের চ্যাটবক্স কম্পিউটারে খুলে পিডিএফটি প্রিন্ট আউট করালেন। এরপরই ঘটল আসল কান্ডটা। ফোনটি শিক্ষিকার হাতে দিয়ে কর্মচারীটি জানান লগ আউট করেছে। কিন্তু তখনও হোয়াটস্যাপে দেখাচ্ছে লগ-ইন রয়েছে। কর্মচারীটিকে লগআউট করতে জোর করলে সে চেঁচামেচি শুরু করে। লোকজন জড়ো হয়। দোকানের মালিকও অপরাধ স্বীকার না করেই শিক্ষিকার উপর চোটপাট করেন। ওখান থেকে বেরিয়ে আরেকটি ক্যাফেতেও শিক্ষিকা গেলেন। সেখানেও তারা জানিয়ে দেয় তাদের কম্পিউটারেই শিক্ষিকার মেইল খুলতে হবে নচেৎ কোনোভাবেই ডকুমেন্ট ম্যাসেজ করে প্রিন্ট আউট হবে না। ব্যপারটা বেশ সন্দেহজনক। জনস্বার্থে বিষয়টি বিশদে জানিয়ে উত্তরপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শিক্ষিকা।
অল্পশিক্ষিত থেকে স্কুলচলতি ছেলেমেয়েদেরও আজ ক্যাফের সামনে নানা কারণে দাঁড়াতে হয়। বহুজন আবার শিক্ষিত হলেও কম্পিউটারের মারপ্যাঁচ হয়ত সবটা বোঝেন না। চোখের নিমেষে তাদেরই আড়ালে কিভাবে কম্পিউটারে জমা হয়ে যাচ্ছে গোপন সব তথ্য। এরপর যেকোনো প্রোফাইল হ্যাকিং বা ব্ল্যাকমেইলিং কি খুব কষ্টকর হবে এদের পক্ষে? এই দুশ্চিন্তা থেকেই শিক্ষিকা যান পুলিশ স্টেশনে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুলিশের দুর্ব্যবহারের শিকার হন তিনি। শিক্ষিকা জোরগলায় বলেন উত্তরপাড়াবাসীর স্বার্থে এই ডায়েরি তিনি করবেনই। মনিকা দেবী এই বিশ্রী ঘটনাটির অভিজ্ঞতায় রাগে ফেটে পড়েছেন। অনুমতি ছাড়াই ফোনের গোপন তথ্যে হাত দেওয়াটা ক্রাইম বলেই মনে করেন। যদিও তিনি এক্ষুনি হাল ছাড়ছেন না, রাজ্যের সাইবার ক্রাইমেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।
Discussion about this post