“শ্যামা মা কি আমার কালো রে, শ্যামা মা কি আমার কালো”- ছেলেবেলা থেকে চিরকালই দেখে এসেছি মায়ের কালো রূপ। যা চিরপরিচিত ‘কালী’ নামে। কালী ছাড়া মায়ের অন্যান্য রূপ, বিশেষত মা দূর্গা হলেন সূবর্ণবর্ণা। তবে এই প্রকৃতি তো ব্যতিক্রমে পূর্ণ বটেই। আর প্রকৃতিতে শক্তির মূল আধার যিনি, তাঁর কোনও ব্যতিক্রম থাকবে না তা কি হয়? সেই ব্যতিক্রমী মা দূর্গাই আবির্ভূত হন ‘কালো’ বর্ণ ধারণ করে। সাড়ম্বরে পূজিতও হন তিনি, মা দূর্গা হিসাবেই। এমনকি খোদ কলকাতার বুকেই। কি অবাক লাগছে শুনে? তাহলে আসুন আজ জেনে নিই এই পুজোর ইতিহাস…
প্রায় ২৯০ বছরের পুরনো এই পুজোর মূল উদ্যোক্তা ওপার বাংলার শ্রী হরিদেব ভট্টাচার্য্য। পাবনা জেলার স্থলবসন্তপুরের জমিদার ছিলেন তিনি। আদতে তিনি ছিলেন এক নদীয়াবাসী। তবে নাটোরের রাণী ভবানী তাঁকে স্থলবসন্তপুরের জমিদার হিসাবে নির্বাচিত করেন। সেই জমিদার বাড়িতেই প্রথম কেশবর্ণা রূপে পূজিত হল দেবী। যদিও বহু বছর ধরেই সেই পরিবার ছিল মা কালীর আরাধ্য। তবে জমিদার হরিদেবের আমলেই প্রথম শুরু হল দুর্গাপূজা।
তবে মায়ের রূপের এমন ব্যতিক্রম কেন? কারণটা আর কিছুই না, স্বপ্নাদেশ। দেবী স্বপ্নে হরিদেবকে বলে কালো মূর্তির পূজা করতে। তারপর থেকেই ভট্টাচার্য্য পরিবার মেতে ওঠেন কালো দূর্গার আরাধনায়। দেশভাগের পর এপার বাংলায় এসে জমিদার পরিবার ওঠেন বেলেঘাটা অঞ্চলে। মায়েরও স্থান হয় সেখানেই। বছরের পর বছর সেই বেলেঘাটাতেই চলে আসছে মায়ের এই পুজো।
তবে দেবী মূর্তির রঙ কালো হলেও তাঁর চার সন্তান কিন্তু গৌর বর্ণ ধারণকারীই। তবে চিরাচরিত অবস্থানের উল্টোদিকে স্থান তাঁদের। মহিষাসুরের গাত্রবর্ণ সবুজ। সাধারণতঃ তন্ত্র মতে ‘ভদ্রকালী’ রূপে পূজিতা হন মা। ‘সপ্তসিন্ধু’র জলই একমাত্র ব্যবহৃত হয় পূজায়। বহু আগে মহিষ বলিদানের প্রথা জারি থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ। পরিবর্তে বলি দেওয়া হয় চালকুমড়ো। দেওয়া হয় অন্ন ভোগ, সকালে নিরামিষ এবং রাতে আমিষ। এছাড়াও সন্ধিপুজোতে মাছভাজা এবং দশমীতে দই, কলা, পান্তাভাত সহযোগে আপ্যায়িত হন দেবী।
ওপার বাংলার ঐতিহাসিক এই পূজা বর্তমানে এখনও জারি রয়েছে ভট্টাচার্য্য পরিবারে। জমিদারবাবু আজ বেঁচে না থাকলেও তাঁর উত্তরসূরীরা এই ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে যেতে সক্ষম। তাই ভট্টাচার্য্য পরিবারে কালো মায়ের আরাধনা জারি থাকবে আগামীতেও। পদ্মা পেরিয়ে গঙ্গাপারে এসেও যার জৌলুস কমেনি এতটুকুও।
Discussion about this post