কথায় বলে- ‘ইচ্ছা থাকলে কি না হয়!’ সেই কথাকেই বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন তিনি। পেশায় সামান্য এক কমলালেবু বিক্রেতা। মাসিক রোজকারও নিতান্ত। নিজের সংসার চলে প্রায় টেনেটুনেই। কিন্তু তাঁর ইচ্ছাশক্তি অসামান্য। আর সেই ইচ্ছের কাছেই মাথা নুইয়েছে আর্থিক প্রতিবন্ধকতাও। তিনি হারেকালা হাজাব্বা। রোজগারের সামান্য টাকা তিলে তিলে জমিয়েই কর্ণাটকের এই ফল বিক্রেতা গড়ে ফেলেছেন আস্ত এক বিদ্যালয়।
কর্ণাটকের নিউপাদাপু গ্রামের বাসিন্দা বছর ৬৮-র হারেকালার সংসার পুরোটাই নির্ভর করে তাঁর ফল বিক্রির রোজগারে। দিন আনি দিন খাই হারেকালার দিন কাটত রাস্তায় রাস্তায় গাড়ি ফেরি করে কমলালেবু বিক্রি করে। কিন্তু হঠাৎ বিদ্যালয় গড়ে তোলার কথা মাথায় এল কেন তাঁর? হারেকালা নিজেই জানান সে প্রসঙ্গে। একদিন এক বিদেশী দম্পতি বিদেশী ভাষাতেই জানতে চান তাঁর ফলের দাম। কিন্তু তিনি বুঝতে না পেরে নিরুত্তর থাকায় ফল না কিনেই ফিরে যেতে হয় সেই দম্পতিকে। ঘটনাটির জেরে তাঁর মন খারাপ হয়ে যায় এবং মাথায় আসে গ্রামের বাকি বাচ্চাদের যেন ভবিষ্যতে এরকম ভাষা সমস্যায় না পড়তে হয়। কিন্তু গ্রামে যে কোনও বিদ্যালয়ই নেই! তখনই হারেকালা সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে এক বিদ্যালয় গড়ে তোলার।
এরপর তিলে তিলে জমিয়েছেন রোজগারের বেশিরভাগ অংশ। তা দিয়েই ২০০০ সালে গ্রামে গড়ে তোলেন একটি বিদ্যালয়। গ্রামের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই বাইরে না গিয়ে সেই বিদ্যালয়েই শিক্ষা লাভের জন্য আসতে থাকে। এমনকি আশেপাশের অন্যান্য গ্রাম থেকেও শিক্ষার্থী এসে ভিড় জমায় হারেকালা প্রতিষ্ঠিত সেই বিদ্যালয়েই। পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকলে ঋণ নিয়েই জমি কিনে বিদ্যালয়টির প্রসারের কাজেও হাত লাগান তিনি। বর্তমানে তাঁর সেই বিদ্যালয়ে বহু দরিদ্র শিশুই শিক্ষা লাভে সক্ষম হয়েছে।
হারেকালার প্রশংসায় পঞ্চমুখ গ্রামের লোকজনও। এই কৃতিত্বের জন্য চলতি বছরে পদ্মশ্রী পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন কর্ণাটকের এই ফল বিক্রেতা। তাঁর ইচ্ছা আগামী দিনে গ্রামে যেন একটি কলেজও প্রতিষ্ঠিত হয়। আসলে ইচ্ছাশক্তির চেয়ে বড় আর হয়তো কিছুই নয়। আর ইচ্ছা থাকলেই যে উপায় হয়, তার প্রকৃত দৃষ্টান্তই আজ গড়ে দিয়েছেন সেই কমলালেবু বিক্রেতা, হারেকালা হাজাব্বা।
Discussion about this post