এই বছরটা যেন শুরু থেকেই বিষণ্ণতায় মোড়া। করোনার জেরে মহালয়ার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও পুজো নিয়ে মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস এবার অনেকটাই কম। তবে জাঁকজমক কম হলেও নিয়ম মেনে পুজো হবে কলকাতা সহ গোটা রাজ্যেই,কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ খানিক বিপাকে পড়েছেন ঢাকিরা। অন্যান্যবার এই সময় ঢাকিদের কাছে বায়না চলে আসে পুজো কমিটির কাছ থেকে। কিন্তু এ বছর তার ব্যতিক্রম হল। এখনও অধিকাংশ ঢাকির কাছেই আসেনি পুজোর বায়না।
মূর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে রয়েছে একটি ঢাকিদের গ্রাম, যার নাম সোনাটিকরি রবিদাসপাড়া। এই গ্রামের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২৯ সালে। কথিত আছে, কোনও এক জমিদার বাড়িতে ঢাক বাজাতে গিয়েছিলেন পাঁচু ও খোকন রবিদাস নামের দুই ভাই। দুই ভাইয়ের ঢাকের তালে খুশি হয়ে জমিদার তাঁদের ৪৩ শতক জমি দান করেন। সেই জমিতেই গড়ে ওঠে বর্তমানের এই গ্রাম। গ্রামের ২০-২৫ জন পরিবার সকলেই পূর্ব পুরুষ ধরে ঢাক বাজিয়ে চলেছেন। তবে এ বছর কেউই পুজোর বায়না পাননি। যদিও প্রথা মেনে ঘর থেকে ঢাক বের করে তা ধোওয়া মোছা করার পর তাতে সিঁদুরের প্রলেপ লাগিয়ে দেবীর আগমনের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন।
সারাবছরই মূলত দুর্গাপুজোর দিকেই চেয়ে থাকেন এই পরিবারগুলি, এইসময় চলে চরম ব্যস্ততা আর একমাত্র এই সময়ই একসাথে অনেকটা অর্থও ঘরে তুলতে পারেন ঢাকিরা। কিন্তু এই করোনা দশায় ঢাকিদের খোঁজ করছেন না কেউই। এই গ্রামের এক বাসিন্দা পেশায় ঢাকি জানান, “এ বছর কোনও পুজোর বায়না আসেনি। করোনা ভাইরাসে লকডাউনের কারণে এমনিতেই অন্যান্য পুজোতেও ঢাকের বায়না পাওয়া যায়নি। সকলেই এই দুর্গাপুজোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ঢাক বাজানো ছাড়া আর অন্য কোনও উপায়ও নেই টাকা উপার্জনের। খুবই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে।”
কভার চিত্র ঋণ – মল্লিকা চাকি
Discussion about this post