“দেয়ার আর মোর থিংস ইন হেভেন অ্যান্ড আর্থ, হোরাশিও ; দ্যান আর ড্রেমট অফ ইন ইয়োর ফিলোসোফি!” প্রখ্যাত সাহিত্যিক শেক্সপিয়ার তো সেই কবেই এ কথা তার নায়ক হ্যামলেটের মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন। আজ এই বিংশ শতকে দাঁড়িয়েও একবারে অক্ষরে অক্ষরে মেলে সে কথা। বিজ্ঞানের অগ্রগতি সত্ত্বেও আজও এমন বহু রহস্য রয়েছে এ পৃথিবীর বুকে, যার আঁচ পায় না কেউই। এমনই রয়েছে কিছু প্রথা বা বিশ্বাস, যার ব্যাখ্যা পাওয়া সাধারণ বুদ্ধিতে প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। যুগের পর যুগ ধরে মানুষের মনে গেঁথে থাকে সে বিশ্বাস। যে বিশ্বাসে ভর করেই আজও তারা বেঁচে রয়েছেন। আসামের মায়ং গ্রামের বাসিন্দারা হলেন তারই নিদর্শন।
আচ্ছা আপনি কি কালো জাদুতে বিশ্বাস করেন? মনে করেন কি জাদুর সাহায্যে কারুর ক্ষতি করা সম্ভব? মায়ং গ্রামবাসীরা কিন্তু করেন। শুধু বিশ্বাসই নয়, তাদের কাছে এটি যেন এক সংস্কার। ‘মায়ং’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ ‘মায়া’ থেকে। কথিত রয়েছে, ভীমের পুত্র ঘটোৎকচ নাকি স্বয়ং কৃষ্ণের থেকে আশীর্বাদ পেয়েছিলেন যে মায়া বিদ্যায় তিনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠ। ঘটোৎকচ তাঁর সেই মায়াবিদ্যার চর্চা করতেন যে গ্রামে সেই গ্রামই নাকি মায়ং। এখান থেকেই তিনি বহু জাদুবিদ্যা শিখে পরবর্তীতে যুদ্ধের কাজেও তা লাগিয়েছিলেন। সেই তখন থেকেই সে গ্রামে চলে আসছে জাদুবিদ্যার প্রথা। যা চলছে বর্তমানেও…
গুয়াহাটি থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে আজও বংশ পরম্পরায় চলে আসছে জাদুবিদ্যার চর্চা। রয়েছে কালো জাদু নিয়ে নানারকম ‘মিথ’। মানুষকে অন্য প্রাণীতে পরিণত করা বা কোনও জড় বস্তুতে প্রাণ সৃষ্টি করা, এসব যেন বাঁ হাতের খেল সে গ্রামে। কোনও অশুভ কাজ করিয়ে নেওয়ার তাগিদে নাকি দেশ বিদেশ থেকে আজও ছুটে আসেন মানুষ। পূর্বে এই গ্রামের এক মাত্র পেশাই ছিল তা। গ্রামের প্রতিটা মানুষই প্রায় জাদুবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। বর্তমানে এই গ্রামে প্রায় একশোর কাছাকাছি বাসিন্দা জানেন জাদুবিদ্যার চর্চা। তাদের মধ্যে যেমন রয়েছে বয়স্ক মানুষ, তেমনই রয়েছে নতুন প্রজন্মের কিছু নতুন মুখও।
মায়ং সেন্ট্রাল নামে একটি সংগ্রহশালাও মজুত সে গ্রামে। যেখানে রয়েছে কালো জাদুতে ব্যবহৃত যাবতীয় সামগ্রী। জাদু করানোর তাগিদ ছাড়াও সেগুলি দেখতেও ভীড় জমান আশেপাশের বহু পর্যটকই। বিখ্যাত জাদুকর পি সি সরকারও নাকি একবার গিয়েছিলেন সেই গ্রামে। তাঁর জীবনে গ্রামটির নাকি বিশেষ গুরুত্বও ছিল। তবে বর্তমানে গ্রামবাসীদের মধ্যে কিছুটা হলেও কমেছে কালো জাদুর প্রতি আগ্রহ। জীবিকার একমাত্র উপায় শুধু কালোজাদু নয়, অর্থনৈতিক চাপে বরং অন্যান্য পেশাতেও জড়িয়ে পড়েছেন তারা। তবে আজও কালো জাদু বললে ভেসে ওঠে এই গ্রামের কথাই। যে গ্রামে গেলে আপনার বহু আকাঙ্খিত কোনও কাজ সফল হবেই। জাদু দিয়েই হবে সে ইচ্ছা পূরণ। অন্ততঃ গ্রামবাসীরা আজও তাই বিশ্বাস করেন। বিজ্ঞান নাই বা মানুক! সেই অন্ধ বিশ্বাস নিয়েই কিন্তু আজও বেঁচে রয়েছেন সে গ্রামের প্রতিটা মানুষ। তারা, একমাত্র তারাই নাকি পারেন এই সৃষ্টিকে বদলাতে…
Discussion about this post