অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের নাম তো নিশ্চয়ই শুনেছেন! কিন্তু অশ্বক্ষুরাকৃতি কাঁকড়া? আজ্ঞে হ্যাঁ! দেখা মেলে তারও। ঘোড়ার ক্ষুরের মত উপবৃত্তাকার এই কাঁকড়ার আসল নাম ‘লিমিউলাস’। কিন্তু কাঁকড়া হলেও প্রজাতিগত দিক থেকে মাকড়সার সঙ্গেই এর বেশি মিল। তবে এর মূল আকর্ষণ কিন্তু অন্য! শুনলে অবাক হবেন এই কাঁকড়ার এক লিটার রক্তের দাম প্রায় ১৬ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১২ লাখ টাকা! আরও আশ্চর্যের বিষয় এই রক্তের রং কিন্তু চিরাচরিত লাল নয়। বরং নীল। এবং চিকিৎসার কাজেও এই রক্ত বেশ গুরুত্বপূর্ণই বলা চলে।
লিমিউলাস কাঁকড়ার রক্তে হিমোগ্লোবিনের বদলে রয়েছে হিমোসায়ানিন। ফলে এই রক্ত নীল বর্ণের। এছাড়াও কাঁকড়ার রক্তে অ্যামিবোসাইট নামক একটি উপাদান রয়েছে। এই অ্যামিবোসাইট সামান্যতম ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতিও বুঝতে পারে। তাই চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বা বিভিন্ন ভ্যাকসিনে ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতি নির্ণয়ের কাজে লাগানো হয় এটি। রক্তের এই অসাধারণ ক্ষমতার জন্য যে কোনোও ব্যাকটেরিয়া বা বিষাক্ত পদার্থ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে লিমিউলাস। লিমিউলাস কাঁকড়া আরেকটি বিশেষ নামেও বেশ পরিচিত। ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’। আজ থেকে ৪৪ কোটি ৫০ লাখ বছর আগের পৃথিবীতেও এদের দেখা পাওয়া যেত। ডাইনোসরের আগমণেরও প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম নিজেদের অস্তিত্ব মেলে লিমিউলাসের।
তবে ইদানীং এই কাঁকড়ার দলও বিপন্নের তালিকায়। সম্প্রতি ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজার্ভেশন অব নেচার’ (আইইউসিএন) এই কাঁকড়াকে ‘মহা বিপন্ন’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। কারণ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এই কাঁকড়ার রক্তের গুরুত্ব অপরিসীম। ঠিক এই কারণেই প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্র উপকূল থেকে প্রায় সাত লাখের কাছাকাছি কাঁকড়া ধরা হয়ে থাকে। তার মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের রক্ত কাজে লাগানো হয়। এভাবে চললে আগামী ৫০ বছরের মধ্যেই আমেরিকায় এই কাঁকড়ার সংখ্যা হ্রাস পেতে চলেছে বলেও জানিয়েছে আইইউসিএন। তবে আশার খবর এই যে অতি সম্প্রতি এই কাঁকড়ার সংরক্ষণে বিশেষ তৎপর হয়েছে তারা। বিজ্ঞানীরাও লিমিউলাসের অ্যামিবোসাইটের উপাদানের মতই একটি কৃত্রিম পদার্থ তৈরি করতে চেষ্টা করছেন, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
Discussion about this post