লাল জামা, লাল টুপি, সাদা চুল আর লম্বা দাড়ি—কাঁধে উপহারের ঝুলি নিয়ে যে মানুষটা বড়দিনে সবার চোখে ভাসেন, তিনি সান্তা ক্লজ। ক্রিসমাস মানেই সান্তা। দোকান, রাস্তা, বাড়ির পার্টি, সব জায়গাতেই তাঁর দেখা মেলে। অনেক সময় বাড়ির ছোট সদস্যদের আনন্দ দেওয়ার জন্য অনেকেই সান্তা সেজে উৎসবে যোগ দেন। তবে, এই সান্তা সাজার চল আজকের নয়। বহু বছর ধরে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এটা চলে আসছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এক সময় সান্তাকে ঘিরেই তৈরি হয়েছিল বড় বিতর্ক। কারণ, সেই সমাজে গভীরভাবে ছিল বর্ণবৈষম্য।
এক সময় আমেরিকায় বড়দিনের পার্টি করতেন মূলত ধনী শ্বেতাঙ্গরা। সেই পার্টিতে সান্তা ক্লজ ভাড়া করে আনা হতো। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গদের সেখানে ঢোকার অনুমতি ছিল না। বড়দিনের মতো আনন্দের উৎসব থেকেও তাঁদের দূরে রাখা হতো। অথচ উৎসব তো সবার। এই বঞ্চনাই জন্ম দিয়েছিল এক নতুন চরিত্র—‘কালো সান্তা’। কালো সান্তার প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯০১ সালের একটি মার্কিন পত্রিকায়। বিংশ শতকের শুরুর দিকে বিভিন্ন ক্রিসমাস অনুষ্ঠানে কৃষ্ণাঙ্গ সান্তাদের দেখা যেতে শুরু করে।
১৯১৫ সালে এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের এক অনুষ্ঠানে কৃষ্ণাঙ্গ সান্তাদের উপস্থিতির কথাও জানা যায়। তাঁরা গান আর হাস্যরস দিয়ে অনুষ্ঠান মাতিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে কালো সান্তা শুধু বিনোদনের চরিত্র নয়, সমাজের বার্তাবাহক হয়ে উঠতে থাকেন। ১৯১৯ সালে প্রথমবার আমেরিকার রাস্তায় দেখা যায় কালো সান্তাদের। ‘ভলান্টিয়ার্স অফ আমেরিকা’ নামের একটি সংস্থা দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিল। সান্তা সেজে রাস্তায় নেমে শিশুদের উপহার দেওয়া হয়, যাতে তারা বড়দিনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়।
তবে এই পথ সহজ ছিল না। অনেক শ্বেতাঙ্গ-নিয়ন্ত্রিত শপিং মলে কৃষ্ণাঙ্গদের ঢুকতে দেওয়া হতো না। বাইরে দাঁড়িয়ে কালো সান্তারা অপমান, গালিগালাজ এমনকি হিংসার শিকার হয়েছেন। ১৯৬০-এর দশকে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় কালো সান্তা হয়ে ওঠেন প্রতিবাদের প্রতীক। মিছিল, পিকেটিং, সচেতনতা প্রচারে তাঁদের দেখা যায়। সেখান থেকে আজ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টেছে। বর্ণবৈষম্য এখন আর আগের মতো নয়। শিকাগোর মত শহরে এখন মোটামুটি কালো সান্তাদের দেখা মেলে। সম্প্রতি মল অফ আমেরিকা তাদের বিভিন্ন শপিং মলে কালো সান্তাদের রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। এক সময় যে উৎসব মানুষকে ভাগ করেছিল, আজ সেই উৎসবই হয়ে উঠছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক সুন্দর হাতিয়ার। কালো সান্তা তারই প্রমাণ।






































Discussion about this post