পরিবেশ অধিকারের রক্ষায় ভারতে অসংখ্য আন্দোলন হয়ে গেছে, হয়ে চলেছে। চিপকো আন্দোলন (Chipko Movement), নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন পরিবেশের অধিকারে লড়াইয়ের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গত কয়েক দশকে যমুনা প্লাবনভূমি সংরক্ষণ, বনরক্ষার আন্দোলন, কচ্ছ, লাদাখের পরিবেশ সুরক্ষা উদ্যোগ; এই সবকটিই ভারতের পরিবেশ আন্দোলনের অংশ। এই আন্দোলনগুলি কখনও সফল হয়েছে, কখনও ব্যর্থ হয়েছে, কখনও অবদমিত হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই সাধারণ মানুষের শক্তি তার প্রমাণ দিয়েছে এবং পরিবেশ সচেতনতার স্তর বৃদ্ধি করেছে।
বর্তমানে আরাবল্লী পর্বত (Aravalli Hills) নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নতুন আইন। ২০ নভেম্বর ২০২৫ এ সুপ্রিম কোর্ট আরাবল্লী পর্বতের সংজ্ঞা (Aravalli Hill Definition) দিয়ে বলেছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ মিটার বা তার বেশি উঁচু ভূমিই কেবল আরাবল্লী পর্বত হিসেবে গণ্য হবে। ফলে, পর্বতমালার প্রায় ৯০% এলাকা আইনি সুরক্ষা হারাতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ অনেক ছোট পর্বত বা উঁচু অংশ এই নতুন শর্তে ‘পর্বত’ হিসেবে গণ্যই হচ্ছে না। এর প্রতিক্রিয়ায় রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি জুড়ে “Save Aravalli” আন্দোলন তৈরি হয়েছে। এতে রয়েছেন পরিবেশকর্মী, আদিবাসী কমিউনিটি, নাগরিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলিও।
আরাবল্লীর উপর অবৈধ খনন পরিবেশ ও জনজীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। আরাবল্লী পর্বতমালা উত্তর ভারতীয় সমভূমি ও মরুভূমির মাঝে একটি প্রাকৃতিক দেওয়াল হিসাবে কাজ করে। এই দেওয়াল বায়ুদূষণ কমায়, বৃষ্টির জল জমায়, থর মরুভূমি থেকে বয়ে আসা বালির প্রবাহ কমাতে সাহায্য করে। নতুন সংজ্ঞা ও সম্ভাব্য খনন কাজের সম্প্রসারণ এই প্ৰাকৃতিক কর্মকান্ডকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করবে বলে অনেক পরিবেশকর্মী ও বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন। পাশাপাশি, অনিয়ন্ত্রিত খনি ও বন উজাড়ের কারণে স্থানীয় মানুষের পানীয় জলের স্তর কমবে, কৃষিকাজে বাঁধা সৃষ্টি হবে, আদিবাসী মানুষ বাসস্থান হারাবেন এবং বন্যপ্রাণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কর্তৃপক্ষের দাবি, এই নতুন সংজ্ঞা পরিবেশ রক্ষার জন্য এবং অবৈধ খনির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে বাস্তবে এই সংজ্ঞা ঠিক উল্টো কাজ করবে। রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলো এই সিদ্ধান্তকে খনি মাফিয়া ও ক্ষমতাসীন শক্তির পক্ষে বলে অভিযোগ তুলেছে। অনেকেই বলছেন, বর্তমান সরকার বিগত বছরগুলিতে ভারতের সুরক্ষিত এবং ইকোলজিক্যালি সংবেদনশীল স্থানে কর্পোরেট মাইনিং কোম্পানির প্রবেশ করিয়েছে নিজের স্বার্থে, এখানে কোথাও মানুষের পক্ষ নেই। হাসদেও অরণ্য ধ্বংস হয়েছে, নদীর জল দূষিত হয়েছে, পাহাড় ভেঙে সড়কপথ তৈরি হচ্ছে। সবই হচ্ছে উন্নয়ন, বিকাশের স্বার্থে। কিন্তু এই উন্নয়নের কঙ্কাল যেদিন বেরিয়ে আসবে, সেদিন হাতে আর সময় থাকবে না।






































Discussion about this post