সমুদ্রের কালো জলরাশির বুক চিরে এগিয়ে চলেছে ডিঙি। তরঙ্গের বুকে হাল ধরা এক কিশোরী। চোখে তার দৃঢ়তা, মুখে প্রতিবাদ। তার হাতে নেই অস্ত্র, নেই কোনো সেনাদল। তবু সে যেন হয়ে উঠেছে এক সেনাবাহিনী। পৃথিবীর সমস্ত ক্ষমতাবানদের সামনে সে দাঁড়িয়ে একা, মানবতার পক্ষ নিয়ে। তার নাম গ্রেটা থুনবার্গ। পৃথিবী যখন নীরব, তখন তার কণ্ঠস্বর গর্জে উঠেছে, অহিংসাই শক্তি, প্রতিবাদই জীবন।
গ্রেটা থুনবার্গের এই অভিযাত্রা যেন নতুন করে মনে করিয়ে দেয় গান্ধীজী কে। এবারও একা একজন মানুষ দাঁড়িয়েছেন যুদ্ধবাজ দুনিয়ার বিরুদ্ধে। “Global Sumud Flotilla”- এই নামের নৌযাত্রা শুরু হয়েছিল গাজা উপকূলে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে। ডেকান হেরাল্ড-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে শিরোনাম ছিল, “When teen activist Greta Thunberg echoed Gandhi’s view”! এ যেন ইতিহাস আবার পুনরাবৃত্ত হচ্ছে। গ্রেটা পরিবেশ আন্দোলন ছাড়িয়ে এখন বিশ্বমানবতার কণ্ঠস্বর। ইজরায়েল তাকে এবং তার সুমুদ ফ্লোটিলার সাথীদের গ্রেফতার করেছে। করেছে অভব্য আচরণ। তবে সেই আচরণ বিগত সময়ে প্যালেস্টাইনের মানুষের উপর হয়ে আসা আচরণের তুলনায় কিছুই নয়।

ভারতের মাটিতেও আছেন এমনই একজন, যিনি একইভাবে অহিংস প্রতিবাদের পথে। তিনি সোনাম ওয়াংচুক। তিনিও প্রকৃতি ও মানুষের জন্য জন্য লড়াই করছেন। গান্ধীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ সোনাম উপবাসে বসেন, ঠান্ডার রাতে তুষারাচ্ছন্ন প্রান্তরে দাঁড়িয়ে মানুষকে মনে করিয়ে দেন যুদ্ধ নয়, প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান এবং বুদ্ধিই বাঁচার পথ। গ্রেটা আর ওয়াংচুক- দুজন দুই প্রান্তের মানুষ, কিন্তু দুই জনের আন্দোলনের মূলেই আছে, অহিংসা। রাষ্ট্র এদেরকেই গ্রেপ্তার করে, কারণ এই পথকেই রাষ্ট্র ভয় পায়। এই পথে রাষ্ট্রের কালো বিকৃত কঙ্কাল মানুষের সামনে প্রকাশিত হয়ে পড়ে।

গাজার আকাশে এখনো আগুন ঝরে। শিশুদের কান্না ঢেকে দেয় যুদ্ধবাজদের গর্জন। ইজরায়েল রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার অজুহাতে ধ্বংস করে সভ্যতা, আর পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ তাকিয়ে থাকে নির্বিকার চোখে। “সুমুদ ফ্লোটিলা” আজ সেই নীরবতার বিরুদ্ধ প্রতীক। ৪০টিরও বেশি জাহাজ এবং ৪৪টিরও বেশি দেশের প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারীর সমন্বয়ে গঠিত ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বেসামরিক নৌবহর হিসেবে পরিচিত হয়েছে। রয়েছেন ইতালি থেকে ২২ জন, মালয়েশিয়া থেকে ১৫ জন, স্পেন থেকে ৬৫ জন, তুরস্ক থেকে ২১ জন, পাকিস্তান থেকে ৬ জন এবং বাংলাদেশ থেকেও ১ জন। বিশ্বমানবতার পক্ষে এই ঐক্যবদ্ধ নৌযাত্রা আজ নিপীড়ন ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এক প্রতীকী প্রতিবাদে পরিণত হয়েছে।
Discussion about this post