কলকাতা ও শহরতলিতে রাতভর বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। জলজটের কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অন্তত নয় থেকে এগারো জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম কলকাতা এত রেকর্ড বৃষ্টিপাতের সাক্ষী হলো। উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের সেই বিধ্বংসী বন্যায় শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা সপ্তাহের পর সপ্তাহ জলে ডুবে ছিল। রাস্তাঘাট, রেলপথ ও বিদ্যুৎ পরিষেবা ভেঙে পড়েছিল, অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়েছিলেন, প্রাণহানিও হয়েছিল বহু। এবারের বৃষ্টি সেই দুঃসহ স্মৃতিকেই যেন ফের জাগিয়ে তুলেছে।
শহরের বহু অংশ এখনো জলমগ্ন। আবহাওয়া দফতর আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে, ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বহু এক্সপ্রেস ও মেল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে, স্থানীয় ট্রেন পরিষেবাও ব্যাহত। সড়কে গোনাগুনতি বাস চলাচল করছে, মেট্রো রেল পরিষেবা আংশিকভাবে চালু রাখা সম্ভব হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী দু’দিনের জন্য রাজ্যের সমস্ত সরকারি, সরকার-সহায়তাপ্রাপ্ত ও সরকার-পৃষ্ঠপোষিত বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছেন। পাহাড়ি এলাকার স্কুলগুলোকে অবশ্য ছুটির বাইরে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি সিবিএসই ও আইসিএসই বোর্ডের স্কুল কর্তৃপক্ষকেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ছুটি ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে এই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার মধ্যেও বহু মানুষ পুজোর প্যান্ডেল দেখতে রাস্তায় নেমেছেন, যা একদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে আরও বিপাকে ফেলছে সাধারণ মানুষকে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমজীবী মানুষরা। যাঁদের জীবিকা প্রায় থমকে গেছে। তাঁদের বেঁচে থাকাই চ্যালেঞ্জের মুখে! আশ্রয়, চিকিৎসা ও খাদ্যের নিশ্চয়তা না দিয়ে সরকারের উদাসীন মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। পাশাপাশি, তুলনামূলক স্বচ্ছল মানুষের মানবিকতা নিয়েও সন্দেহ জাগে! কেউ কেউ বিলাসে মত্ত থেকে আশেপাশের অসহায় মানুষের প্রতি সামান্য সহমর্মিতাটুকুও দেখাচ্ছেন না। এই বৈপরীত্যই আজকের শহরের সংকটকে যেন আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
চিত্রঋণঃ অর্ক চৌধুরী
Discussion about this post