ছবিঃ প্রতীকী
ভোরের কুয়াশা ভেদ করে জিয়াগঞ্জের প্রাচীন মন্দিরটিতে আজও বেজে ওঠে ধূপ-ধুনো মিশে থাকা প্রার্থনার সুর। চারদিন ধরে এখানে সিংহবাহিনী ও দুর্গার আরাধনা চলে, আর এই পুজো ঘিরে থাকে এলাকাজুড়ে বিশেষ উৎসবের আবহ। পালযুগের কষ্টিপাথরে নির্মিত দেবীর দশভুজা প্রতিমাটি শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, আড়াই শতাব্দীরও বেশি ইতিহাসের সাক্ষী।
জিয়াগঞ্জের এই মন্দিরের প্রতিমাটি তৈরি হয়েছিল ১৬৮৮ সালে। মূর্তির গায়েই পালি ভাষায় খোদাই করা তার নির্মাণকালের তারিখ বেশ স্পষ্ট বোঝা যায়। ইতিহাসবিদরা বলছেন, প্রায় ২৫৯ বছর আগে দশভুজা এই দুর্গামূর্তি এই এলাকায় আসে। মূর্তি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে পালযুগের কষ্টিপাথর, যা আজও মন্দিরের নিচের বেদিতে দৃশ্যমান। সময়ের ছাপের আঁচ পাওয়া যায় মূর্তির গায়ের প্রতিটি খোদাই রেখায়।
প্রতিদিন প্রতিমার পুজো হয়ে থাকে, কিন্তু দুর্গাপুজোর চারদিনে দেবীকে বিশেষভাবে দুর্গারূপে পূজিত করা হয়। উৎসবের দিনগুলিতে ভোগ হিসেবে থাকে অন্ন, পোলাও, ভাজা, তরকারি, মিষ্টান্ন। নবমীতে বিশেষভাবে রান্না করা ইলিশ মাছ সাজানো হয় ভোগের সঙ্গে। প্রতিদিনের ভোগে ঐতিহ্য অনুসারে পরিবেশিত হয় বকফুলের বড়া। পশুবলি একসময় হয়ে থাকলেও এখন তা একেবারেই বন্ধ। বর্তমানে, পাঁঠার বদলে কুমড়ো বলি করা হয় প্রতীকীভাবে।
পুজোর ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ও সম্পাদকরা জানাচ্ছেন, এলাকার এক বণিক দুধ ঘাট থেকে এই কষ্টিপাথরের প্রতিমাটি উদ্ধার করেন প্রায় আড়াই শতক আগে। বটু অধিকারীর পরিবার জমি দান করেন মন্দির নির্মাণের জন্য। আজ সেই জমি ট্রাস্টি বোর্ডের হাতে। যদিও মূর্তিটি দুর্গারূপেই আরাধিত হন। তবে, ভক্তরা কখনও কখনও দেবীকে মঙ্গলচণ্ডী রূপেও পুজো করেন। মন্দিরে রয়েছে একটি পঞ্চমুণ্ডির আসন। সেটি তান্ত্রিক আচারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে বহুবছর।
Discussion about this post