দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির ভ্রমণের মরশুম। বহু মানুষ ভুবনেশ্বর, পুরী, কোনার্ক কিংবা দার্জিলিং-সিকিমে ভিড় জমান। আর বাঙালির সেই চিরপরিচিত “দীপুদা” (দীঘা , পুরী, দার্জিলিং) তো আছেনই! তবে বিগত কয়েকবছরে বাঙালি স্বাদ বদলেছে। এখন অফবিট না হলে যেন ঘোরা হয়না। আর অনেকে পুজোর ভিড়ভাট্টার বাইরে শান্ত, নির্জন প্রকৃতির খোঁজে থাকেন। তাঁদেরই জন্য এই জায়গা! জায়গাটি এখনও জায়গা পায়নি পর্যটন মানচিত্রে। ঘন অরণ্য, পাহাড়ি উপত্যকা, ঝরনা আর জলাধারে ঘেরা এই অঞ্চল একেবারেই অফবিট। বালিমেলা জলাধারের নীল জল, সাবেরি ও সিলেরু নদীর শান্ত সৌন্দর্য, আর অরণ্যের ভেতরে লুকোনো অসংখ্য জলপ্রপাত নিয়ে জ্বলজ্বল করছে ওড়িশার মালকানগিরি।
এই জনপদের আকর্ষণ শুধুমাত্র প্রকৃতি নয়, সেই প্রকৃতি সংলগ্ন উপজাতির সংস্কৃতিও। গাদাবা, বন্ডা, কন্ধ প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা আজও বহন করে প্রাচীনতার ছোঁয়া। বনজীবন, নাচ-গান, লোককথা আর হস্তশিল্পে ভরা এই সংস্কৃতি একটি স্মরণীয় পর্যটন অভিজ্ঞতা। মালকানগিরির বিভিন্ন গ্রামে সাপ্তাহিক বাজার বসে, যেখানে পাওয়া যায় মহুয়া ফুল, বাঁশের তৈরি জিনিস, লাক্ষা কিংবা জঙ্গলের খাবার। বাঁধাধরা গতের ভ্রমণের বাইরে এ হবে আপনার একেবারে আনকোরা ভ্রমণ।
মালকানগিরির জঙ্গলের ভেতরে আম্বাপানি গুহা ও জলপ্রপাত এখনও কেউ চেনেন না। সাবেরী উপত্যকার সতীবালা জলপ্রপাত বর্ষার পরে একেবারে অন্যরকম রূপ নেয়। আর বালিমেলা জলাধারের দূরবর্তী চিত্রকোন্ডা ব্যাকওয়াটার্স (backwaters) যেন মিনি আন্দামান! ছোট ছোট দ্বীপে পৌঁছে যাওয়া যায় নৌকো বা বোটের সাহায্যে। এই এডভেঞ্চারের সাক্ষী হতে পারেন আপনিও। তাছাড়া, পাহাড়ি বন্ডা উপজাতির বাসস্থান বাইরের মানুষের কাছে যতটা দূর,অজানা, ততটাই কৌতূহল জাগানো।
স্থানীয় গাইড ছাড়া অনেক জায়গা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নির্জন পথ পাড়ি দিতে লাগে জিপ বা বাইক। খাবার জল সঙ্গে রাখা জরুরি, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বেশিরভাগ সময়েই অচল। কলকাতা থেকে মালকানগিরি পর্যন্ত সরাসরি কোনো ট্রেন বা ফ্লাইট নেই। সবচেয়ে সহজ উপায় হলো কলকাতা থেকে ভাইজ্যাক (Visakhapatnam) পর্যন্ত ট্রেন বা ফ্লাইটে যাওয়া, তারপর সেখান থেকে বাস বা ট্যাক্সিতে প্রায় ৭ ঘণ্টা। চাইলে কলকাতা থেকে জগদলপুর পর্যন্ত ট্রেনে গিয়েও সেখান থেকে সড়কপথেও মালকানগিরি যাওয়া যায়, জগদলপুর থেকে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। সরাসরি সড়কপথেও (প্রায় ৮৫০-৯০০ কিমি) মালকানগিরি যাওয়া সম্ভব, সময় লাগে ১৭-১৮ ঘণ্টা।
Discussion about this post