গত ২২ আগষ্ট ২০২৫ এ কলকাতার রাসবিহারী মোড় থেকে কালীঘাট পর্যন্ত আশাকর্মীদের একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৫০,০০০ আশাকর্মী একত্রিত হয়ে সরকারের কাছে তাঁদের দাবি তুলে ধরেন। পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়ন ও পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যকর্মী ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই মহামিছিল ভোর থেকেই শহরের পরিবেশ উত্তপ্ত করে তোলে। দুপুর থেকে শহরের যানচলাচল কার্যত প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। “কালীঘাট চলো” স্লোগানে মুখরিত হয়ে আশাকর্মীরা তাঁদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মীরা এসে জমায়েত হন রাসবিহারী মোড়ে এবং সেখান থেকে কালীঘাটের দিকে অগ্রসর হন।
২২ আগস্ট পুলিশি অনুমতিপ্রাপ্ত এই জমায়েতের পর আশাকর্মীরা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের উদ্দেশ্যে মিছিল শুরু করলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়নি। পরে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সচিবের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। স্মারকলিপিতে মূল দাবিগুলি ছিল; রাজ্য ঘোষিত নূন্যতম ভাতা প্রয়োগ, কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, বার্ষিক ৩% ইনক্রিমেন্ট, পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য সমান ইন্সেন্টিভ, ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি, ইন্সেন্টিভ বকেয়া দ্রুত মেটানো ও দ্বিগুণ বৃদ্ধি, করোনা আক্রান্ত আশাকর্মীদের জন্য ঘোষিত ১ লক্ষ টাকা প্রদান এবং আশাকর্মীদের সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর স্বীকৃতি দেওয়া। আশাকর্মীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে কম পারিশ্রমিক ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে কাজ করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এই অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ আন্দোলনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ করে তুলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এত বিশাল সংখ্যক আশাকর্মীর একযোগে রাজপথে নামা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। ভবিষ্যতে আশাকর্মীদের দাবিগুলো পূরণে রাজ্য সরকার নীতিগত পরিবর্তনের পথে হাঁটতে বাধ্য হতে পারে। স্বাস্থ্য খাতে কর্মসংস্থান ও পারিশ্রমিক কাঠামোতেও এই আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আশাকর্মী নেত্রী ইসমাত আরা খাতুন জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব তাঁদের দাবিগুলি মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং কিছু দাবি, যেমন মাতৃত্বকালীন ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি, ও ন্যূনতম মজুরি ১৩,০০০ টাকা ইত্যাদিকে যুক্তিসঙ্গত বলে স্বীকার করেন। তিনি আশ্বস্ত করেন যে স্মারকলিপিটি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য কয়েকজন প্রতিনিধির ফোন নম্বর নেন। এছাড়া তিনি জানান, পুজোর পরে এক মাসের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আশাকর্মী প্রতিনিধিদের দাবিদাওয়া নিয়ে একটি সরকারি বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তথ্যঋণ: Ground Zero
Discussion about this post