কলকাতার দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের ১৭ বছর বয়সী ছাত্রী সৃজনী ISC 2024 পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করেছেন। তবে এটিই এই মুহূর্তে তাঁর একমাত্র পরিচায়ক নয়। আর একটি কারণে তিনি মানুষের আলোচনায় ঘোরাফেরা করছেন। সমাজে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন হিসেবে, তিনি নিজের পদবি ত্যাগ করেছেন। ধর্ম হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন ‘মানবতা’কে।
তিনি বলেছেন, এই ব্যবস্থা তিনি নিজে করেন নি। করেছেন তাঁর বাবা মা। “আমি জন্ম থেকেই কোনো রকম পদবী ছাড়া বড় হয়েছি”। তাঁর পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা সংবাদমাধ্যম বড় হেডলাইন করে বলেছে সৃজনী তাঁর পদবী ত্যাগ করেছেন। কিন্তু সৃজনী বলছেন, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ তাঁর বাবা মায়ের, এবং অবশ্যই তিনি তাঁর বাবামায়ের মতাদর্শকে সমর্থন করেন। তাঁর বাবা মা চাননি যে তিনি তাঁর নামের মধ্য দিয়ে তিনি কোনো পুরুষতান্ত্রিকতা, জাতিগত পরিচয়, কাস্ট এর পরিচয় বহন করে বেড়ান।
সৃজনীর এই বক্তব্য, তাঁর মা বাবার সিদ্ধান্ত একটি বৃহত্তর আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যে আন্দোলনটি আসলে নাম থেকে জাতি-ভিত্তিক পরিচয় অপসারণ করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের পক্ষে। দিল্লি হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, যাঁরা জাতি-ভিত্তিক বৈষম্যের মুখোমুখি হন, তাঁদের পদবি পরিবর্তনের অধিকার রয়েছে, যা ভারতীয় সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকারের অংশ হিসেবে স্বীকৃত।
সৃজনীর স্কুল, দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুল, সমতা ও মানব ঐক্যের মূল্যবোধে ভিত্তি করে সমগ্র শিক্ষা প্রদানের জন্য পরিচিত। স্কুলের দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষার্থীদের কেবল একাডেমিকভাবে নয়, নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবেও বিকাশ লাভে উৎসাহিত করে, সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলে। সৃজনীর এই পদক্ষেপ সমাজের প্রচলিত মানদণ্ডকে চ্যালেঞ্জ করে এবং একটি আরও সমতাভিত্তিক বিশ্বের পক্ষে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের প্রভাবকে তুলে ধরে, যা অনুপ্রেরণাদায়ক।
Discussion about this post