সীমা কুমারী ঝাড়খণ্ডের একটি ছোট্ট গ্রাম ডাহুতে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে সমাজের রীতি অনুযায়ী মেয়েদের পড়াশোনার চেয়ে ঘরের কাজ শেখানোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সীমার জীবন এক ভিন্ন পথে এগোতে শুরু করে যখন মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি যুবা ফাউন্ডেশনের ফুটবল প্রোগ্রামে যোগ দেন। ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে, যদিও তখনও তিনি জানতেন না, যে এই খেলা একদিন তার জীবন পুরোপুরি বদলে দেবে।
ফুটবলই তাকে তার ছোট্ট গ্রাম থেকে বের করে নিয়ে আসে বড় মঞ্চে। প্রথমে তিনি জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পান এবং পরে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পেও ডাক পান। কিন্তু ফুটবলের পাশাপাশি তিনি পড়াশোনাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন, সুযোগ পেলেই নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এই প্রচেষ্টার ফলে তিনি সিয়াটল উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান এবং পরবর্তীতে কেমব্রিজ ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে সামার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তিনি কখনো কল্পনাও করেননি, যতক্ষণ না তার এক শিক্ষক, যিনি নিজেও হার্ভার্ডের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন, তাঁকে আবেদনের পরামর্শ দেন। প্রথমে দ্বিধা থাকলেও, তার পরামর্শদাতাদের সহযোগিতায় তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং একেবারে মনপ্রাণ ঢেলে আবেদন করেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের ফলস্বরূপ, তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ স্কলারশিপ পেয়ে যান! বর্তমানে তিনি হার্ভার্ডে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করছেন, যা তাঁর অসাধারণ সংগ্রামের এক অনন্য উদাহরণ।
সীমা কুমারীর গল্প শুধুমাত্র তাঁর নিজের জন্য নয়, বরং তাঁরই গ্রামের অসংখ্য মেয়ের জন্যও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যেখানে একসময় মেয়েদের জন্য পড়াশোনার সুযোগ ছিল সীমিত, সেখানে তিনি প্রমাণ করেছেন যে সঠিক সুযোগ এবং অদম্য মানসিকতা সবকিছু বদলে দিতে পারে। সামাজিক স্টেরিওটাইপকে চূর্ণ করে তিনি ইতিহাস তৈরি করেছেন এবং তার গল্প সাহস, ধৈর্য এবং কখনো পিছু না হটার এক অনবদ্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
Discussion about this post