কলকাতার “শেয়ার্ড লিগ্যাসি” শিরোনামে হচ্ছে বস্ত্র প্রদর্শনী। মুম্বাইয়ের প্রদর্শনীর সাফল্যের পর এতে অংশ নিচ্ছেন সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়। কলকাতার বস্ত্র উদ্যোগপতি দর্শন শাহের এই উদ্যোগ বাংলার বিস্মৃতপ্রায় বস্ত্র ঐতিহ্যকে নতুন করে তুলে ধরছে। একসময় লন্ডন, প্যারিস, লিসবন, কোপেনহেগেনের মতো শহরগুলো বাংলার মসলিন, সিল্ক, জামদানিতে মোহিত ছিল। অথচ ২০১৫ সালে লন্ডনের ‘Fabrics of India’ প্রদর্শনীতে বাংলার বস্ত্রশিল্প মাত্র পাঁচ থেকে সাত শতাংশ জায়গা পেয়েছিল। সেই অভাববোধ থেকেই শাহের প্রচেষ্টা, বাংলার তাঁতশিল্পকে তার প্রকৃত স্বীকৃতি দেওয়ার।
একসময় বাংলার তাঁতিরা ইউরোপের ফ্যাশন জগতে রাজত্ব করতেন। প্রদর্শনীতে থাকছে সেই ইতিহাসের নীরব সাক্ষী কিছু দুর্লভ নিদর্শন—কোলচা, সপ্তগ্রামে তৈরি অলঙ্কৃত চাদর যা লিসবনের বাজারে জনপ্রিয় ছিল, হাজি রুমাল, যা হজযাত্রীরা স্মারক হিসেবে বহন করতেন, এবং মুগা সিল্ক স্কার্ট, যা ১৭৮১ সালে ডাচ অভিজাত নারীদের পরিধানে শোভা পেত। বাংলার মসলিনের খ্যাতি এমনই ছিল যে একটি শাড়ি অনায়াসে দেশলাই বাক্সে স্থান পেত। প্রদর্শনীতে ফ্রান্সে অলঙ্কৃত একটি ১৮শ শতকের মসলিন গাউনও রয়েছে, যা ইউরোপের বিলাসবহুল ফ্যাশনের প্রমাণ।
তবে শুধু গৌরবের নয়, প্রদর্শনী তুলে ধরছে বাংলার বস্ত্রশিল্পের অন্ধকার অধ্যায়ও। পর্তুগিজ ও ওলন্দাজদের শোষণে বাংলার সুদক্ষ তাঁতিদের অনেকেই কেপটাউন, মেক্সিকোসহ নানা দেশে দাসত্বে বাধ্য হন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলার কাঁথার কারুকাজ ও মেক্সিকোর রেবোজো শালের নকশায় এই বেদনার ইতিহাসের ছাপ স্পষ্ট।
জানা যাচ্ছে, এই মার্চ ৩১ পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে “Textiles from Bengal: A Shared Legacy”, যা বাংলার বস্ত্রশিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রভাবকে নথিভুক্ত করেছে। বাংলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার এই প্রয়াস এক নতুন যুগের সূচনা হতে পারে।
Discussion about this post